আপনি পড়ছেন

করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই লড়াই করছে মিয়ানমার। এ লড়াইয়ে দেশটির অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেয়। এরই মধ্যে গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার দখল নেয়। এরপর থেকে গণতন্ত্র ফেরানো ও জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল মিয়ানমার। সোমবারও (৩ মে) সংঘর্ষে অন্তত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন দেশ জান্তার প্রশাসনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

myanmar h 3

সিএনএন বলছে, করোনা মহামারির প্রভাবে মিয়ানমারের অর্থনীতি ভাঙা পায়ে হাঁটছিল। আর সেনা অভ্যুত্থানের পর রক্তাক্ত পরিস্থিতিতে অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে, দেশটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হবে। আর এটি স্পষ্ট হয়েছে সম্প্রতি জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও। বিশ্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি সতর্ক করেছে, করোনা মহামারি ও সেনা অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক সংকটের প্রভাবে এ বছরের শেষ নাগাদ মিয়ানমারের অর্ধেক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যের কবলে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

মিয়ানমারে এখন খাদ্যসামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে। সুনির্দিষ্টভাবে আয় ও মজুরি কমেছে। দিনে গড় আয় ১ দশমিক ১০ ডলারে নেমে আসায় ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সুরক্ষার মতো মৌলিক সেবা থেকে লাখ লাখ মানুষ বঞ্চিত। এ সংকটে সবচেয়ে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুরা। দ্রুত নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক দুরাবস্থা থেকে বেরিয়ে না এলে এ বছরের মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি বা ৪৮ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মুখে পড়বে।

জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এবং ইউএনডিপির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক কানি উইগনারাজা বলেন, করোনা ও চলমান রাজনৈতিক সংকট মিয়ানমারকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশটিতে গণতান্ত্রিক উত্তরণের এক দশকে উন্নয়নে যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, তা মাত্র কয়েক মাসেই ধসে পড়ছে। উন্নতিতে এ ধস দেশটিকে আবার ২০০৫ সালের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ওই সময়ে দেশটি সামরিক শাসনাধীনে ছিল এবং এর জনসংখ্যার অর্ধেকই ছিল গরিব।

myanmar 2 1

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের শেষ নাগাদ করোনা মহামারির কারণে মিয়ানমারে গড়ে ৮৩ শতাংশ বাড়িতে পারিবারিক আয় প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। মহামারির আর্থ-সামাজিক প্রভাবের কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। এ রকম অবস্থায় সামরিক অভ্যুত্থানের পর অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি, হুমকির মুখে পড়া মানবাধিকার এবং উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্যের হার আগামী বছর নাগাদ আরও ১২ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে।

অথচ ২০১১ সালে গণতান্ত্রিক শাসনে ফেরার পর মিয়ানমারের দারিদ্র্য পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের ফলে ২০০৫ সালে যেখানে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ দরিদ্র ছিল, সেটি কমে ২০১৭ সালে হয় ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চলছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। এসব বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মারা গেছে অন্তত ৮০০ মানুষ। গ্রেপ্তার হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার। বিক্ষোভে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন চিকিৎসক, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কারখানার শ্রমিকরা। এতে করে বেহাল উৎপাদনমুখী অর্থনীতি। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তাদের কর্মবিরতি অর্থনীতিকে খাদের কিনারে ঠেলে দেবে, জান্তা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবে।

myanmar 3 2

একই সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন দেশটির কৃষির সাথে জড়িত ৭০ শতাংশ মানুষ। উৎপাদন করলেও ফসল বাজারজাতে পরিবহন পাচ্ছেন না তারা। ইউএনডিপির প্রশাসক আছিম স্টেইনার বলেন, ‘শুধু উন্নয়ন নয়, বৈষম্য ও নাজুক অবস্থা মিয়ানমারকে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে। এটি চূড়ান্ত ফলাফলে মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।’

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি এক প্রতিবেদনে সতর্ক করেছে, মিয়ানমারে যে হারে ক্ষুধা ও হতাশা বাড়ছে, তাতে আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশটির ৩৪ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে। মোটের ওপর মিয়ানমারের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে এবং এ অবস্থা দেশটিকে এশিয়ার একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত করছে। অবশ্য স্টেইনার বলছেন, এর সবই নির্ভর করবে আগামী দুই মাসের মধ্যে মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তার ওপর।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.