আপনি পড়ছেন

বিশ্ব যখন বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য ও এর কারণে সৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তখন ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের এক নারী এ সমস্যা সমাধানে চমৎকার উপায় বের করেছেন। নিজের এ উদ্ভাবনের মাধ্যমে তিনি শুধু নিজেই অর্থ উপার্জন করছেন তা নয়, শত শত দরিদ্র নারীকে জীবিকার পথ দেখিয়েছেন।

rupjyoti saikia gogoi at her loom in bocha gaon village in assamরূপজ্যোতি সাইকিয়া গোগোই

৪৭ বছর বয়সী রূপজ্যোতি সাইকিয়া গোগোই নামের এই নারী উদ্যেক্তা কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের পাশেই বাস করেন। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় স্থান পাওয়া এই উদ্যানটি আসামের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি এক শিংযুক্ত গন্ডার রয়েছে এখানে। এছাড়া হাতি, বাঘ, প্যান্থার, ভাল্লুক এবং বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি পাখিও রয়েছে।

গোগোই এবং ভিলেজ ওয়েভস নামে পরিচিত তার সম্প্রদায় থেকে আসা অন্যান্য নারীরা এই উদ্যান থেকে পর্যটকদের ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট ও পানির বোতল সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে তা নিজেরাই পরিষ্কার করে শুকিয়ে বিভিন্ন ধরনের কারুপণ্য তৈরি করে থাকেন।

gogoi centre with tourists outside her gift shopদোকানের সামনে রূপজ্যোতি সাইকিয়া গোগোই, সাথে পর্যটকরা

২০০৪ সালে শুরু করা এই উদ্যোগের মাধ্যমে আসামের ৩৫টি গ্রামের দুই হাজার ৩০০ জনের বেশি নারীকে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করেছেন গোগোই। পাশাপাশি জাতীয় উদ্যানের আশেপাশের অঞ্চলে প্লাস্টিক দূষণ বিস্ময়করভাবে কমে এসেছে।

এ প্রসঙ্গে গোগোই বলেন, ‘প্রতি বছর কাজিরিঙ্গায় লাখ লাখ পর্যটক ঘুরতে আসেন। তাদের ফেলে যাওয়া আবর্জনা স্তূপ হয়ে থাকে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যেখানে প্লাস্টিকের ব্যাগ ফেলা হয়; যা দৃষ্টিকটুই নয় প্রাণীদের জন্য বিপদজনকও।’

গোগোইর স্বামী বিনোদ অলাভজনকভাবে স্থানীয় বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করেন এবং পরিবেশ ও প্রাণীদের ওপর প্লাস্টিক আবর্জনার প্রভাব নিয়ে নিজের শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছেন।

এই দম্পতি আরো জানান, তারা এই সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ত্রিপক্ষীয় একটি সমাধানে এসেছেন, আর তা হচ্ছে-বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশবান্ধবভাবে এর পুনঃব্যবহার এবং স্থানীয় নারীদের স্বনির্ভর করা।

ফেলা দেয়া এসব বর্জ্য সৃজনশীল ব্যবহারে কার্যকর একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে মাসের পর মাস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন গোগোই, ‘প্রথমে আমি বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে প্লাস্টিকের ব্যবহার করতে চেয়েছি। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। এরপর অন্যান্য পণ্য নিয়েও পরীক্ষা চালিয়েছি। সর্বশেষ আমি তুলার তন্তুর সঙ্গে প্লাস্টিক মিশিয়ে টেকসই ও বহনযোগ্য ফেব্রিক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি; যা কারুশিল্প পণ্য তৈরির জন্য আদর্শ।’

এক্ষেত্রে মায়ের কাছ থেকে শেখা সহজ তাঁতশিল্পের কৌশল ব্যবহার করেছেন গোগোই। পরবর্তীতে তিনি এ কাজ বোঁচা গাও গ্রাম ও গোলাঘাট জেলার নারীদেরও শেখান। মুহূর্তে তার এ কাজের কথা ছড়িয়ে পড়ে এবং শত শত নারী আগ্রহ দেখায়। একবছরের মধ্যে তার এ উদ্যোগ ব্যাপক পরিচিতি পায়।

বর্তমানে শত শত নারী প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে কারুকাজের হাতব্যাগ, টেবিল মেট, ডোরমেট, ওয়াল হ্যাংগিং, কোস্টার, টেবিল কভার, রানারসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করছেন।

২০১২ সালে গোগোই  তার গ্রামে কাজিরাঙ্গা হাট নামে একটি দোকান চালু করেন। এ দোকান থেকেই তাদের তৈরি পণ্যগুলো বিক্রি করা হয়। পর্যটন মৌসুমে দোকানটি থেকে পণ্য বিক্রি করে একেকজন মাসে ১৫০ থেকে ২০০ ডলার আয় করে থাকেন।

গত দুই দশকে হাজার হাজার নারী গোগোই’র এই উদ্যোগে উপকৃত হয়েছে। তবে কারিগররা কিছু সমস্যার মধ্যেও রয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে গোগোই বলেন, ‘আমরা সেকেলে তাঁত দিয়ে কাজ করছি। পণ্যের গুনণগত মান উন্নয়ন এবং উৎপাদন বাড়াতে আমাদের আধুনিক তাঁত প্রয়োজন। বিদেশি পর্যটকরা আমাদের পণ্যের প্রশংসা করেন, ফলে এসব পণ্যের আরো বিক্রি ও মুনাফার সম্ভাবনা রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছি। আমাদের মতো তাঁতীদের জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বেশ কিছু স্কিম রয়েছে, যা প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে পৌঁছায় না।’

সূত্র: আল-জাজিরা

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.