অগ্নিপরীক্ষায় ইসরায়েলের নতুন সরকার

একযুগ ধরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর আসনে থাকা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে হটিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বিরোধীরা। নানা নাটকীয়তার পর গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হয়।

জেরুজালেমে ইসরায়েলিদের মিছিল

তার একদিন পরেই গতকাল মঙ্গলবার জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে মিছিল বের করে ইসরায়েলি উগ্র জাতীয়তাবাদীরা। এর ফলে ফিলিস্তিনের হামাসের সঙ্গে করা দেশটির ভঙ্গুর অস্ত্রবিরতি হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ভয়েস অব আমেরিকা জানায়, ইসরায়েলের ক্ষমতায় আসা নতুন জোট সরকারকে ‘দুর্বল’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতিয়তাবাদীদের নিয়ে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে ৮ দলের সমন্বয়ে গঠিত এই সরকার। উগ্র জাতীয়তাবাদীদের মিছিলটি যে পথে করার অনুমোদন দিয়েছে পুলিশ, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ‘দামেস্ক ফটক’ পেরিয়ে গেলেও মুসলিমদের এলাকায় পড়বে না।

জেরুজালেমে ইসরায়েলিদের মিছিল

এই ফটকেই গত এপ্রিল-মে মাসে ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাত হয়েছিল। পরে আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণেও সেই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলশ্রুতিতে ১১ দিনব্যাপী রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধ হয় দুই পক্ষের মধ্যে। ওই যুদ্ধে ২৫০ ফিলিস্তিনি ও ১৩ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পর অস্ত্রবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়। ওই চুক্তিতে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করা হলে ফের যুদ্ধের সতর্কবার্তা দিয়েছিল হামাস।

ফলে এই মিছিলে উস্কানির আশঙ্কা করা হলেও রাজনৈতিক কারণে তা বাতিল করতে পারেনি ইসরায়েলি সরকার। তবে এর অনুমতি দিয়েও রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিতে পড়েছে সরকার। কেননা, জোট সরকারের শরিক আরবদের রাআম দলের নেতা মনসুর আব্বাস বলছেন, নতুন সরকারকে খাটো করতেই মিছিলটি করা হয়েছে। এটিকে আর সামনে না বাড়াতে এবং সর্বাধিক সংযম রক্ষা করতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

নাফতালি বেনেট, ফাইল ছবি

এ ছাড়া ইহুদি ও আরবদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নতুন করে সংঘাত এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে আরেকটি শরিক দল। দলটির নেতা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজ বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান।

নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ডানপন্থী ইহুদি ধর্মীয় দল ইয়ামিনার প্রধান নাফতালি বেনেট। চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ২ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর ইয়াইর লাপিডি হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। এই জোটে বাম, উদার, কট্টর, জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় দল রয়েছে।

গত দুই বছরে চতুর্থবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ২৩ মার্চ, যাতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনো দল। ফলে ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা নেতানিয়াহু সরকার গঠনে ব্যর্থ হন। পরে বিরোধী দল ইয়েশ আটিদ পার্টির নেতা ইয়াইর লাপিডকে সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

ইয়াইর লাপিড, ফাইল ছবি

জোট সরকারের অন্য শরিক দলগুলো হলো- বেনি গান্তজের নেতৃত্বাধীন কাহোল লাভান, নিতজান হরোউইটসের মেরেটজ, আভিগদোর রিয়েবারমানের ইসরায়েল বেইতেইনু, মেরাভ মিশেইলির লেবর, গিডেউন সা’রের নিউ হোপ ও মনসুর আব্বাসের মনসুর আব্বাস রাম (আরব ইসলামিস্ট)।

ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেট-এর মোট আসন ১২০টি। সংবিধান অনুযায়ী, কোনো দল বা জোটকে সরকার গঠন করতে হলে ৬১টি আসনের প্রয়োজন পড়ে। এতগুলো আসন না পাওয়ায় সরকার গঠন নিয়ে টানাপোড়েন চলে গত দুই বছর।