বেপরোয়া মানুষ, কিছুই মানছে না

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে তা নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী লকডাউনের বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। অনেক অফিস কিংবা কারখানা বন্ধ হয়েছে অথবা সীমিত পরিসরে কাজকর্ম চালাচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য কাজকর্মও বন্ধ। ফলে মানুষ নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে চায়। কিন্তু যাবতীয় গণপরিবহন বন্ধ। কিন্তু যাত্রীরা মরিয়া।

বেপরোয়া মানুষ, কিছুই মানছে না

তাই গণপরিবহন না থাকলেও পথ-ঘাটের নানা ভোগান্তি সহ্য করে এবং অতিরিক্ত পয়সা খরচ করে হলেও বাড়ি ফিরছে মানুষ। ভেঙে ভেঙে বেশি ভাড়া দিয়ে বিভিন্ন বাহনে করে ঢাকা বা আশপাশের জেলাগুলো থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষ ফিরছেন নিজেদের বাড়িতে। আর এসব মানুষ সকল স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা পার হচ্ছেন ফেরি।

আজ মঙ্গলবার ফেরি ফরিদপুরে দেখা যায়, গাদাগাদি করে নদী পাড়ি দিচ্ছেন মানুষ। একজন শ্বাস ফেললেও আরেকজনের গায়ে গিয়ে পড়ছে- এ রকম অবস্থা। গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে নিজের কাঁধে থাকা পোটলাটি পর্যন্ত রাখার জায়গা নেই। ফলে তা মাথায় করে নিয়েই দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে।

বেপরোয়া মানুষ, কিছুই মানছে না

শারীরিক দূরত্ব রাখার তো কোনো বালাই নেই। তখন বেশির ভাগ যাত্রীর মুখেই নেই মাস্কও। আর যাদের মুখে মাস্ক রয়েছে তাদের অনেকেই তা থুতনিতে নামিয়ে রেখেছেন। কী ডেক, রেলিং, সিঁড়ি বা কী নামাজের জায়গা- সর্বত্র একই অবস্থা।

জানা যায়, আজ মঙ্গলবার সকালে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ফেরিটি। এ সময় ফেরিটিতে অ্যাম্বুলেন্স, ট্রাক আর প্রাইভেটকার মিলিয়ে ডজনখানেক গাড়ি ছিল। সেইসঙ্গে ছিল হাজারের বেশি যাত্রী।

শুধু আজ মঙ্গলবার নয়, বরং সোমবার থেকে সারাদেশে লকডাউন জারির দুই দিন আগে যখন প্রাথমিক ঘোষণা আসে, তখন থেকেই চলছে এমন অবস্থা। প্রতিদিন ফেরি বোঝাই করে মানুষ চলছে নাড়ীর টানে বাড়ির পথে।

বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে এভাবে চললেও মানুষের এই জনস্রোত সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও। যেমনটা বলছিলেন মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ পরিদর্শক মো. সিরাজুল কবির। তিনি বলেন, পথে পথে চেকপোস্ট। গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা হেঁটেই ঘাটে চলে আসছে। মানুষ কিছুই বুঝতে চাইছে না।

লকডাউন চলায় যাত্রীবাহী বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুধু পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি সেবার যানবাহন পারাপারের জন্য শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফেরি চালু রেখেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ফেরিতে গাড়ি উঠার আগেই এসব যাত্রী গিয়ে তা দখল করে ফেলছেন।

ফলে বাধ্য হয়েই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে বরং সহযোগিতা করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা সিরাজুল কবির বলেন, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যারা ঘাটে চলেই এসেছে, এখন আমাদের একমাত্র চেষ্টা হলো তাদের দ্রুত পার করে দেওয়া।

এ বিষয়ে শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিসি ব্যবস্থাপক আহাম্মদ আলী বলেন, ফেরি চালু রাখা হয়েছে জরুরি পরিষেবার জন্য। কিন্তু তা এখন যাত্রীদের দখলে। যাত্রীর চাপ এতটাই বেশি যে, তা সামাল দিতে এই রুটের ১৬টি ফেরির মধ্যে ১৫টিই চালাতে আমরা বাধ্য হচ্ছি। কিন্তু তার পরও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোনো কথা শুনতে রাজি না যাত্রীরা।