স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ফের ‘তুলোধুনো’, পদত্যাগ দাবি

জাতীয় সংসদে আবারো স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তুলোধুনো করেছেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। একই সঙ্গে তার পদত্যাগের দাবিও তুলেছেন তারা। স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম, অক্সিজেন সংকট, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলাসহ চিকিৎসা খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে এদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কঠোর সমালোচনা করেন তারা। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নির্লজ্জ আখ্যায়িত করে তার পদত্যাগ দাবি করেন জাতীয় এক সংসদ সদস্য।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ, ফাইল ছবি

আজ শনিবার সংসদের চলতি অধিবেশনের সমাপনী দিনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটান বিএনপির গোলাম মুহম্মদ সিরাজ। তিনি বলেন, বর্তমানে করোনার হটস্পট বগুড়া। গত তিন দিনে ২৪ জন মারা গেছেন সেখানে। হাসপাতালে নেই হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা। সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেই। বগুড়া জেলার তিনটি করোনা হাসপাতাল এখন রোগীতে পরিপূর্ণ।

এ সময় জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সেদিন আমি সংসদে সার্জিক্যাল মাস্ক কেনা নিয়ে কথা বলেছিলাম। আশা করেছিলাম, সেটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বললেন, ‘এটি সত্য নয়’। আজ তথ্য-প্রমাণ নিয়ে এসেছি আমি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে সংসদীয় কমিটি। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এসেছে। আমার দাবি, এ বিষয়ে তদন্ত করতে হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জিজ্ঞেস করলেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী শুধু বলেন সব দিচ্ছি। কিন্তু কোথাও কিছু নেই। এভাবে একটা বছর আমরা নষ্ট করেছি। অথচ আমাদের সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব দিলে ও অর্থ দিলে আমরা বিষয়গুলো ঠিক করে দিতে পারতাম। আইসিইউ বেড আছে। কিন্তু প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্স নেই। অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছেন অধিকাংশ রোগী। সব ঘটনার জন্য শুধু তদন্ত কমিটি হয়, কিন্তু কমিটির রিপোর্ট আমাদের সামনে আজ পর্যন্ত আসেনি। মানুষের জীবনের কি কোনো দাম নেই?

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বললেন এক বছরে নাকি অনেক কাজ করেছেন তিনি। অথচ আজকের খবর বলছে, ৩৭টি জেলায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে ৫ জন রোগী অক্সিজেন পেলেও লাইনে থাকে ২০ জন। অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করে মারা যাচ্ছে মানুষ। এগুলো নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি হাসপাতালে গিয়ে এসব দেখেছেন। তিনি তো করেন জুম মিটিং।

তিনি বলেন, করোনাকালে রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আনন্দে আত্মহারা হয়ে কিস (চুমু) করার কারণে রিজাইন দিতে হয়েছে ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। আর আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কী মানুষ! বুঝলাম না। উনার লজ্জা-শরম বলে কি কিছু নেই। উনার রিজাইন (পদত্যাগ) দেওয়া উচিত।

অন্যদিকে, বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, ওনার বক্তব্যে মনে হয় কোনো এমপিই (সংসদ সদস্য) দায়িত্ব পালন করেন না। অথচ হাসপাতালের চিকিৎসকসহ লোকবল নিয়োগের জন্য উনার দপ্তর পর্যন্ত গিয়েছি আমি। উনার বক্তব্য আপত্তিজনক। গোটা হাউসকে অপমান করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা উচিত।