মরদেহগুলো যেন কয়লা, পরিচয় শনাক্তে লাগবে এক মাস

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন আগুন থেকে বাঁচার আশায় লাফ দিয়ে মারা গেছেন, তাদের মরদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পুড়ে মারা গেছেন বাকি ৪৯ জন, যাদের মরদেহ যেন কয়লা!

সবগুলো মরদেহই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আহাজারি করলেও পরিবারের কাউকে দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, মরদেহ চেনা তো দূরের কথা, অনেকগুলো রীতিমতো কয়লার বড় একটি খণ্ডে পরিণত হয়েছে। তাদের পরিচয় উদ্ধার করতে এক মাস সময় লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের ডিএনএ পরীক্ষক মোহাম্মদ মাসুদ রাব্বী সবুজ।

আজ শনিবার (১০ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে তিনি জানান, মরদেহের দাবি নিয়ে যারা আসছেন আমরা তাদের নমুনা রেখে দিচ্ছি। ওদিকে মরদেহগুলোর দাঁত ও হাড় সংগ্রহ করা হচ্ছে। একদিকে পরিবারের নমুনা পরীক্ষা অন্যদিকে মরদেহের দাঁত ও হাড় পরীক্ষা করে শনাক্তের কাজটা করা হবে। এতে প্রায় ১ মাস সময় লেগে যেতে পারে।

‘শনাক্ত করা হলেও আমরা পরিচয়গুলো প্রকাশ করতে পারবো না। কারণ আমরা এর অথরিটি নই। পরিচয়সহ মরদেহগুলো নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও রূপগঞ্জ থানায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে তারা পরিবারের হাতে তুলে দেবেন।’ বলেন মোহাম্মদ মাসুদ রাব্বী সবুজ।

ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেলে। তখনও ধারণা করা যায়নি, আগুন ছড়িয়ে পড়া কারখানাটিকে এত শ্রমিক আটকা পড়েছিলেন। পরদিন শুক্রবার আগুন নিয়ন্ত্রণের পর বের করে আনা হয় একের পর এক মৃতদেহ! এখন পর্যন্ত ৫২ মৃতদেহের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ভবনটিতে আরও মৃতদেহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান

এদিকে, গতকাল শুক্রবার রাতে পুড়ে যাওয়া ভবনটি পরিদর্শনে গিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ঘোষণা দিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডে যারা মারা গেছেন, তাদের পরিবার ২ লাখ টাকা পাবে। যারা আহত হয়েছেন, তারা পাবে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাছ থেকেও আমরা ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করবো।

বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ক্ষতিপূরণ ঘোষণার পাশাপাশি আরও বলেছেন, এই কারখানায় ১৮ বছরের নিচের শিশু শ্রমিকরা কাজ করতো বলে শুনেছি। সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের একটা টিম এখানে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। তাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে জানার চেষ্টা করবো।’

কারখানাটির শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেজান জুস কারখানায় প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী কাজ করেন। নিচতলার একটি ফ্লোরের কার্টন থেকে হঠাৎ করে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ সময় আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে তা গোটা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। কালো ধোঁয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়।