দায় মেটাল ফুটবল

ক্লাব ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সবকিছুই জিতেছেন লিওনেল মেসি। বার্সেলোনার অনেক সাফল্যের স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের পুরস্কার হিসেবে আর্জেন্টাইন প্লে-মেকার জিতেছেন ছয়টি ব্যালন ডি অর। কিন্তু এসব অর্জন তার কাছে ম্লান। দেশের হয়ে একটা শিরোপা জিততে না পারার যন্ত্রণা প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়িয়েছে তাকে।

অবশেষে ফুটবল বিধাতা ফিরে চেয়েছেন। স্বপ্নপূরণ হয়েছে মেসির। তাও আবার শক্তিশালী ব্রাজিলকে তাদেরই মাঠে ১-০ গোলে হারিয়ে। আজ কোপা আমেরিকার ফাইনালে অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার একমাত্র গোলে শিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা। এই ট্রফিটা যতটা না আর্জেন্টাইনদের তারচেয়েও বেশি মেসির। তার একটা ট্রফির জন্য বিশ্বজুড়ে হাহাকার লেগেছিল ফুটবলে।

গত দেড় দশকের সেরা দুই ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি। প্রথমজন ২০১৬ ইউরো জিতে আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন। কিন্তু আরো একজনের দায় মেটানোর দরকার ছিল ফুটবলের। অবশেষে সেই দায় মেটাল ফুটবল। মেসির হাতে তুলে দিয়েছে আন্তর্জাতিক প্রথম সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ কোপা আমেরিকার রুপালি ট্রফি।

অবধারিতভাবেই আর্জেন্টিনার এই চ্যাম্পিয়নশিপের মধ্যমণি মেসি। মারাকানা স্টেডিয়ামে শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরার সব চোখ খুঁজে নিল মেসিকে। তাকে দেখে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হলো। যে মানুষটা চারটা ফাইনাল হারের দুঃখ বয়ে বেড়াচ্ছিলেন। তন্মধ্যে কোপা আমেরিকায় তিনটি এবং বিশ্বকাপে একটি ফাইনাল হার সঙ্গী।

মেসির রাহুর দশাটা প্রথমবার লাগিয়েছিল এই ব্রাজিলই। ২০০৭ সালে কোপার ফাইনালে তার দল হেরে যায় সেলেকাওদের কাছে। গত আসরেও তো এই ব্রাজিলের কাছেই স্বপ্নভঙ্গ। সেটা অবশ্য সেমিফাইনালে। এবার চিরশত্রুদের সঙ্গে দেখা হলো ফাইনালে। বরাবরের মতো এই ফাইনালেও গোল পাননি মেসি। সহায়তা করতে পারেননি গোলেও। তবু আর্জেন্টিনার স্বপ্নপূরণের নায়ক তিনি।

দুইবারের বিশ্বসেরারা যে ফাইনালে উঠেছে তার আসল নায়ক তো এই মেসিই। নিজে করেছেন চার গোল। সতীর্থদের পাঁচটি গোলে রেখেছেন অবদান। সর্বোচ্চ গোলের স্বীকৃতি গোল্ডেন বুট তো আছেই, এছাড়া নেইমারের সঙ্গে যৌথভাবে জিতেছেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার। কিন্তু এসব কিছুই নয়। মেসির চোখ ছিল শিরোপায়। সেটাও এসেছে। সবমিলিয়ে এবারের কোপা দুহাত ভরে দিয়েছে তাকে।

প্রতিবারই শিরোপার জন্য লড়াই করেছেন মেসি। কিন্তু এবারের মতো মরিয়া হয়ে ওঠেননি কোনোবারই। দেশের হয়ে ক্যারিয়ার সেরা পারফর্ম করেছেন। এর বাইরে ঝরিয়েছেন রক্ত। সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষের ম্যাচে পায়ের মোজা চুয়ে চুয়ে রক্ত ঝরলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করেননি তিনি। দলকে ফাইনালে তুলেই মাঠ ছেড়েছেন।

তাকে হতাশ করেননি ফুটবল বিধাতা। কোপার শিরোপা হাতে দিয়ে দায় মিটিয়েছে ফুটবল। এটা বিশ্বজুড়ে প্রায় সবারই প্রত্যাশিত ছিল। একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা ফুটবলার শূন্যহাতে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ করুক এমনটা বিধাতাও চাননি। যেমনটা চাননি রোনালদোর বেলাতেও।