আহমদ সুজা: স্থায়ী সফলতা পাবে না তালেবান

আফগানিস্তানের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আল-জাজিরা কথা বলেছে দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক প্রধান আহমদ সুজা জামালের সঙ্গে। তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সেখান থেকে চারটি তুলে ধরা হলো।

কেন ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্স (এনডিএসএফ) তালেবানকে ঠেকাতে পারছে না?

আহমাদ সুজা জামাল: তালেবান এই সময়টাতে যে গতিতে এলাকা দখল করছে তা ঠেকাতে এনডিএসএফ অক্ষম। তবে গত তিন-চার মাসে সরকারি বাহিনী তাদের প্রতিরোধ করে এসেছে। তালেবানে ব্যাপক লোকবল ও অস্ত্র যুক্ত হওয়ার পরও কিন্তু সরকারি বাহিনী তাদের প্রতিরোধ করতে পেরেছে।

কিন্তু এখন পারছে না কেন? এখানে ঋতু বা কালগত কিছু সমস্যা রয়েছে। এখন গ্রীষ্ম ও বসন্ত চলছে। এই সময়টা তালেবানের জন্য খুবই ইতিবাচক। এ কারণেই এর আগে তালেবান ৩৪ প্রদেশের মধ্যে মাত্র ১৩-১৪টাতে ঝামেলা সৃষ্টি করতে পেরেছে।

সরকারি বাহিনীর হিসাব, তালেবানের যে লোকবল ও অস্ত্র আছে তা দিয়ে পুরো দেশ দখল করতে পারবে না। তিনি বলেন, যাই বলুন সত্য কথা হলো, তালেবান এখন পর্যন্ত যা করেছে তা পাকিস্তানের সহায়তায় করেছে। লোকবল, অস্ত্র, বিস্ফোরক সবই আসছে পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে।

আপনি কি মনে করেন তালেবান বাইরের কোনো গ্রুপের সহায়তা নিয়ে দখলবাজি করছে?

আহমাদ সুজা জামাল: তালেবান যে কোনো সময় যে কোনো প্রদেশ দখল করতে সক্ষম। কিন্তু তালেবান তা ধরে রাখতে পারবে না। এনডিএসএফ তালেবানকে তাদের দখলীয় অঞ্চল থেকে ক্রমাগত বের করে দিচ্ছে। এখন যেমন তালেবান কুন্দুজ দখল করেছে।

কিন্তু আসল ঘটনা হলো যুদ্ধ চলছে এবং তালেবানকে বের করে দিতে সক্ষম হবে সরকারি বাহি-নী। একইভাবে সেবেরঘানসহ পতন হওয়া সব অঞ্চল থেকে তালেবানকে হটিয়ে দেওয়া হবে। তারা সাময়িকভাবে রাজধানী শহরগুলো দখলে নিচ্ছে এটা সঠিক, কিন্তু তারা তা ধরে রাখতে সক্ষম নয়।

কারণ তারা ২০১৫ সালের পরে আর কোনো রাজধানী শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। আমরা একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছি, যে শত্রুরা তালেবানের মাধ্যমে আফগানে আঘাত হানছে।

আমেরিকা এখন সরকারি বাহিনীর পক্ষে বি-৫২ বিমান ব্যবহার করছে। আগস্টে তারা চলে গেলে কী ঘটবে?

আহমাদ সুজা জামাল: তালেবানের জন্য আফগান বিমানবাহিনী যথেষ্ট। আমেরিকা আগেও বি-৫২ বোমারু বিমান তালেবানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। তারা অনেক বছর ধরেই সরকারি বাহিনীকে সহায়তা করছে। কিন্তু তালেবান তো সড়ক থেকে সড়কে যুদ্ধ করে।

তারা রাস্তায় বিস্ফোরক পেতে রাখে। এসবের কারণে জনগণই সবচেয়ে মারাত্মক পরিণতির শিকার হচ্ছে। আর আমেরিকা চলে গেলে তাদের যুদ্ধ বিমান আফগান বাহিনীর কাছে থেকে যাবে। তা তালেবানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে। আমরা একটা অসম যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।

তালেবান যখন সফলতা পাচ্ছে, তখন শান্তি আলোচনার কী হবে?

আহমাদ সুজা জামাল: আফগান সরকার সমঝোতার পথ সবসময় খোলা রেখেছে। একটা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি চাই আমরা। তালেবান না চাইলেও আমরা সমঝোতা চাই। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশও যুদ্ধবিরতি চায়।

বিশেষ করে, আফগান বেসামরিক লোকজনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তালেবান। এই পরিস্থিতির উন্নতি সবাই চাই। তালেবানের কথা ও কাজে মিল নেই। তারা বলছে শান্তি চায়, কিন্তু সমঝোতার টেবিলে তারা আসছে না।