যাদের নেতৃত্বে ‘অপ্রতিরোধ্য’ তালেবান
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক আলোচনার টেবিলে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু আফগানিস্তান। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর তালেবান যোদ্ধারা অপ্রতিরোধ্য গতিতে আবারো নিজেদের পুরোনো অবস্থানে ফিরে আসছে। গত এক সপ্তাহে তারা ১০টি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা আগাম জানিয়ে রেখেছে, যেভাবে তালেবান অগ্রসর হচ্ছে, তাতে ৯০ দিনের মধ্যে কাবুলের পতন হবে। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তালেবান এর অনেক আগেই কাবুল তাদের করায়ত্তে নিয়ে নিবে।
মোল্লা আবদুল গনি বড়দার এখন তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান
১৯৯৪ সালে সংগঠনটি প্রথমবারের মতো বিশ্ববাসীর আলোচনায় ওঠে আসে। এর মাত্র দুই বছরের মধ্যে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। এরপর দেশটতে কড়া শরীয়া আইন চালু করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সাধারণ মানুষ একে সমর্থন দিলেও পশ্চিমারা একে মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে তালেবানের ব্যাপক সমালোচনায় লিপ্ত হয়।
পাঁচ বছর দেশ শাসনের পর ২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয় তারা। মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর উপর্যুপরি হামলার মুখে তারা অবস্থান নেয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তবে বিদেশি বাহিনীর মুহুর্মুহু হামলাতেও তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। বরং ২০ বছর পর সুযোগ পাওয়ার প্রথম দফাতেই তারা প্রমাণ দিয়েছে, আগের চেয়ে এখন তারা অনেক বেশি শক্তিশালী।
শান্তি আলোচনায় প্রধান আলোচকের ভূমিকায় ছিলেন শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই
বিগত কয়েক বছরে আলোচনার টেবিলে তাদের কিছু লোককে দেখা গেলেও সত্যিকার অর্থে তাদের নেতৃবৃন্দের কাউকেই তেমন চিহ্নিত করা যায়নি। ফলে তাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সবার মধ্যেই কৌতুহল রয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সে তাদের কয়েকজন নেতৃবৃন্দের পরিচয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা এবং মূল নেতা ছিলেন মোল্লা মোহাম্মদ ওমর। ২০১৩ সালে তিনি মারা যান। তারপরে বর্তমানে যারা এ সংগঠনটি পরিচালনা করছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হলো-
হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা: বিশ্বস্ত নেতা হিসাবে পরিচিত হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা বর্তমানে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা। ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হাইবাতুল্লাহ দলের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার কর্তৃত্ব রাখেন। ২০১৬ সালে আফগান-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় তার পূর্বসূরি আখতার মনসুর নিহত হওয়ার পর আখন্দজাদা দায়িত্ব নেন। আনুমানিক ৬০ বছর বয়সী এ তালেবান নেতার অবস্থান সম্পর্কে কারো জানা নেই।
মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব: তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের পুত্র ইয়াকুব সংগঠনের সামরিক অভিযান তদারকি করেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি আফগানিস্তানের ভেতরেই আছেন। তালেবানের অভ্যন্তরে উত্তরাধিকারের লড়াইয়ের সময় আন্দোলনের সামগ্রিক নেতা হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি আখুন্দজাদাকে সামনে রেখেছিলেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তার যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে এবং তুলনামূলক কম বয়সী। সেই বৈঠকেই আখুন্দজাদাকে মনসুরের উত্তরসূরি নির্বাচিত করা হয়। ধারণা করা হয়, তার বয়স ত্রিশের মতো।
সিরাজউদ্দিন হাক্কানি: বিশিষ্ট মুজাহিদ কমান্ডার জালালুদ্দিন হাক্কানীর ছেলে সিরাজউদ্দিন নেতৃত্ব দেন হাক্কানি নেটওয়ার্কের। এ নেটওয়ার্ক পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবানের আর্থিক ও সামরিক সম্পদের তদারকি করে থাকে। ধারণা করা হয়, আফগানিস্তানের বড় বড় আত্মঘাতী বোমা হামলার পেছনে এ নেটওয়ার্ক দায়ী। এছাড়া কাবুলের শীর্ষ হোটেলে হামলা, সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়কে হত্যার চেষ্টা এবং ভারতীয়দের উপর আত্মঘাতী হামলাসহ আফগানিস্তানে বেশ কয়েকটি হাই প্রোফাইল হামলার জন্য তাদেরকে দায়ী করা হয়।
৪০-৫০ বছর বয়সী সিরাজউদ্দিন হাক্কানির ঠিকানাও সবার অজানা।
মোল্লা আবদুল গনি বড়দার: তালেবানদের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বড়দার এখন তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শান্তি আলোচনায় তিনি আলোচক দলের সদস্য ছিলেন। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সে আলোচনা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে। আবদুল গনি বড়দার মোল্লা ওমরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কমান্ডারদের অন্যতম বলে জানা গেছে। ২০১০ সালে তিনি পাকিস্তানের করাচিতে আটক হন এবং ২০১৮ সালে মুক্তি পান।
শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানেকজাই: তৎকালীন তালেবান সরকারের উপমন্ত্রী শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানেকজাই প্রায় এক দশক ধরে দোহায় বসবাস করছেন। ২০১৫ সালে সেখানে দলের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান হয়েছিলেন তিনি। স্টানেকজাই আফগান সরকারের সাথে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি দেশে কূটনৈতিক ভ্রমণে তালেবানদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
আব্দুল হাকিম হাক্কানি: আব্দুল হাকিম হাক্কানি তালেবানের আলোচক দলের প্রধান। তালেবানের প্রাক্তন ছায়া প্রধান বিচারপতি এই হাক্কানি ধর্মীয় আলেমদের কাউন্সিলের প্রধান এবং ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে আখুন্দজাদা তাকেই সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.