তালেবানের একজন পণ্ডিত আছে, নাম মোল্লা বারদার
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মূল নাম মোল্লা আবদুল গনি বারদার। তবে তালেবানের কাছে তিনি জনপ্রিয় ‘মোল্লা ব্রাদার আখুন্দ’ নামেই। পার্সি শব্দ ‘বেরাদর’-এর সহজ বাংলা ‘ভাই’। ‘আখুন্দ’ শব্দটিও পার্সি। এ উপাধি দিয়ে সাধারণত পণ্ডিতদেরই কথাই বোঝানো হয়। তবে এ বারদারের পাণ্ডিত্য বা শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো সরকারি সার্টিফিকেট কিন্তু পাওয়া যায়নি। তবুও তার কৌশলের স্বীকৃতি দিয়েছে কিন্তু পুরো দুনিয়া। তার বুদ্ধির জোরেই ২০ বছর পর আবারো তালেবান ক্ষমতার মসনদে। বলতে গেলে তেমন কোনো কঠিন পরীক্ষা বা ত্যাগ ছাড়াই।
মোল্লা আবদুল গনি বারদার
বারদারের পরিচয়, তিনি তালেবানের রাজনৈতিক প্রধান। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান সত্যি হলে বারদারই হচ্ছেন পরবর্তী আফগান প্রেসিডেন্ট। এই বারদার কিন্তু তালেবানের সর্বময় কর্তা বা প্রধান নেতা নন। ছিলেন না কোনো দিনই। বরং সেই পদ আলোকিত করে আছেন হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। বরাবর দ্বিতীয় স্থানে থেকে নিরবে কাজ করে গেছেন তিনি। আড়ালে থেকে মাথা খাঁটিয়েছেন। বহু বছর সে ভাবে সামনে আসেননি। ফলে কেউ তাকে সেভাবে চেনেওনি।
তবে প্রধান না হয়েও তালেবানের রাজনৈতিক অবস্থানের অভিমুখ কিন্তু তিনিই ঠিক করে দিয়েছেন। দেশে তো বটেই, এমনকি আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তার অবস্থানই ছিল তালেবানের শেষ কথা। ২০১৮ সালে আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসন বারদারের সঙ্গে কথা বলেই তালেবানের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে রাজি হয়েছিল। এ তালেবান কমান্ডারের আশ্বাসেই আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নিতে শুরু করে আমেরিকা। আমেরিকাকে বারদার বুঝিয়েছিলেন, তালেবানও আফগানিস্তানে হিংসার বিরোধী। তারাও আসলে শান্তিই চায়।
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওরে সাথে মোল্লা বারদার, ফাইল ছবি
এতদিন ধরে সাধারণের সামনে মুখ খোলেননি তিনি। কেবলই শান্তি চুক্তি বা এই জাতীয় বড় কিছুতেই ব্যস্ত ছিলেন। কখনো মার্কিন প্রতিনিধি দল, আবার কখনো বা চীনা প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাত, বোঝাপড়ার ব্যাপার। আবার কখনো বা দলবল নিয়ে হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়ার সাথেও আলাপে মেতেছেন।
কিন্তু সাধারণের সামনে এই প্রথম মুখ খুলেছেন তিনি। গত রোববার রাতে তালেবান সেনা আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভবনের দখল নেওয়ার পর বারদার বলেছেন, ‘এ তো সবে শুরু। তালেবানকে আসল পরীক্ষা এ বার দিতে হবে। দেশের মানুষকে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেয়ার দায়িত্ব পালন করতে হবে তালেবানকে।
বারদারের জন্ম ১৯৬৮ সালে কান্দাহারে। জন্মসূত্রে তিনি একজন দুররানি পাশতুন। দুররানিরা আফগানিস্তানের আদি গোষ্ঠী। এদেরই পূর্বপুরুষ আহমেদ শাহ দুররানি আধুনিক আফগানিস্তানের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
নামের সঙ্গে ‘পণ্ডিত’ শব্দটি জুড়ে গেলেও বারদারের শিক্ষা সংক্রান্ত কোনো তথ্য কোথাও নেই। তবে দেশের হয়ে যুদ্ধ করছেন কিশোর বয়স থেকেই। আটের দশকে সোভিয়েতের নিয়ন্ত্রণে চলা আফগান শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তখনই আফগান মুজাহিদিনের সদস্যও হয়েছিলেন। বারদারের সহযোদ্ধা ছিলেন তালেবানদের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমর। ১৯৯২ সালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয় আফগানিস্তান।
তালেবানের যাত্রা তখন থেকেই শুরু। বিস্ময়করভাবে ঠিক পাঁচ বছরের মাথাতেই সাফল্য আসে তালেবানের। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানের দখল নেয় তালেবান। সেই রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন ওমরই। বারদার দায়িত্ব নেন আফগান সেনাদের। ২০০১ সালে মার্কিন সেনারা যখন আফগানিস্তান থেকে তালেবানকে সরিয়ে দেয় তখন বারদার ছিলেন আফগানিস্তানের উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলেন বারদার। সেখানেই তালেবানদের প্রশাসনিক সংগঠন কোয়েত্তা সুরা গঠন করেন। তারপর বহুবার তালেবানের পক্ষ হয়ে আফগান প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন বারদার। সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে সেই কথা অনেক দূর এগিয়েও ছিল। কিন্তু ২০১০ সালে আচমকাই বারদারকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তান।
ধারণা করা হয়েছিল এ গ্রেপ্তারের নেপথ্যে মার্কিন নির্দেশই কাজ করেছে। অবশ্য পরে আমেরিকাই বারদারকে মুক্তি দিতে বলে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সংক্রান্ত উপদেষ্টা জালমে খালিলজাদ বারদারের সঙ্গে দেখা করেন। মুক্তি পেয়ে তখন কাতারের দোহায় রয়েছেন বারদার। সেখানেই আমেরিকার সঙ্গে তার শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
এই চুক্তিতে তালেবানদের ক্ষমতা সংক্রান্ত সমঝোতায় আসার সুযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আমেরিকা। সঙ্গে আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো বাহিনীকে সরিয়ে নেয়ার আশ্বাসও দেয়া হয় আমেরিকার পক্ষ থেকে। সে সময় অনেকেই এই চুক্তি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
আফগান বিশ্লেষকরা বলেন, বারদার আসলে ওই চুক্তি সই করেছিলেন সময় পাওয়ার জন্য। যত দিনে আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়েছে, ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি নিয়েছে তালেবান। সেনা সরলেই আক্রমণ করবেন বলে। পরে নিখুঁত টাইমিংয়ে মাত্র দশদিনের আফগানিস্তানের মতো একটি দেশ প্রায় বিনা বাধায় চলে গেল তালেবানের হাতে।
এখন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে আছেন এই বারদার। সেটি চূড়ান্ত হলে তার দেখা মিলবে হরহামেশাই। শোনাও যাবে তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ কিছু কথা।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.