আফগানিস্তানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইলো ইরান

ইরানের বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, আমেরিকা ও ন্যাটো বাহিনী কেবল নিজেদের স্বার্থে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়েছিল। কাজেই নিজেদের অশুভ স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে আফগান জনগণের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোবাহিনী যে সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট চাপিয়ে দিয়েছে, সেজন্য তাদেরকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ফার্স নিউজ।

ইরানের বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ

নিজের অফিসিয়াল টুইটার পেজে করা এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন জাওয়াদ জারিফ। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের যে অজুহাত তুলে আমেরিকা ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তানে এসেছিল সে দু’টি উদ্দেশ্যই চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

ইরানের বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক উপস্থিতির কারণে যেসব মানুষ হতাহত হয়েছেন, বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।

গত ২০ বছর ধরে এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে আফগানভূমি

প্রায় দুই দশক আগে আফগানিস্তানে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধ এবং দেশটির সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার অজুহাতে দেশটিতে আগ্রাসন চালায় মার্কিন বাহিনী। কিন্তু ২০ বছরেও তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি বরং তালেবানের অগ্রাভিযানের মুখে মার্কিন সেনারা অত্যন্ত অপমানজনক অবস্থায় দেশটি ত্যাগ করছে।

গত ১৫ আগস্ট তালেবান রাজধানী কাবুল দখল করার পর আমেরিকা তার অবশিষ্ট সৈন্য ও কূটনীতিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার জন্য নতুন করে কয়েক হাজার সেনা পাঠিয়েছে। এসব সেনা কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে আসার সাহস পায়নি বরং বিমানবন্দরে চরম বিপর্যয়কর ও ঠাসাঠাসি অবস্থার মধ্যে তাদেরকে কাজ করতে হচ্ছে।

গত সোমবার টুইট বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, আফগানিস্তানে জাতি গঠন আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদা যাতে আফগানিস্তানকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের ওপর আর হামলা না করতে পারে। গত এক দশকে আমরা সেটাই নিশ্চিত করেছি।

বাইডেনের এ বার্তা থেকেই বুঝা যায়, আফগানিস্তানের কোনো সহায়তা বা আফগানবাসীর জীবনমানের কোনো উন্নয়ন নয়, বরং আফগানিস্তানকে ব্যবহার করে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য। অথচ এ লড়াইয়ে আফগানিস্তানকে ২০ বছর ধরে লড়াই আর সঙ্ঘাতের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

এ লড়াইয়ে নিহত হয়েছে হাজার হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষ। অঙ্গহানি হয়েছে আরো লাখ লাখ লোকের। বাস্তুচ্যুত হয়েছে অসংখ্য মানুষ। সব মিলিয়ে লাভ যতটুকু হওয়ার তার সবটুকুই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। আর ক্ষতি হয়েছে কেবলই আফগানিস্তানের। এর বাইরেও বিশ্বের অনেক দেশকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ লড়াইয়ে যুক্ত হয়ে হয়েছে।