ইসরায়েল-মহমুদ আব্বাস বৈঠক: চটেছে হামাস ও ইসলামি জিহাদ

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিগত ১০ বছরের মধ্যে এরকম হাই-প্রোফাইল বৈঠক আর হয়নি। দুই পক্ষই দাবি করে এতে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এ বৈঠকের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের আরেক প্রভাবশালী সংগঠন ইসলামিক জিহাদও নিন্দা জানিয়েছে।

এই দুজনের বৈঠককে মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী আখ্যা দিয়েছে হামাস

হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি সোমবার এই বৈঠকের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি বিপজ্জনক পদক্ষেপ। ফিলিস্তিনের স্বার্থবিরোধী একটি কাজ।

এদিকে বৈঠকে অংশ নেয়া দুই পক্ষের দাবি অনুসারে বৈঠকটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলা হলেও তার বিন্দুমাত্র মূল্যায়ন করেননি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত। তিনি স্পষ্ট ভাষায় ফিলিস্তিনিদের সাথে নতুন শান্তি আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। আলোচিত এই বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী বেনেতের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানায়, ফিলিস্তিনিদের সাথে কোনো কূটনৈতিক প্রক্রিয়া নেই, হবেও না।

হামাস মুখপাত্র আবদুল লতিফ ক্বানুউ, ফাইল ছবি

সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। সে বৈঠকে বাইডেন বলেছিলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের উভয় পক্ষেরই শান্তি চান। কিন্তু বেনেতের আচার-আচরণে বোঝা যাচ্ছে, ফিলিস্তিন নিয়ে কোনো ইতিবাচক কথাই তার পছন্দ নয়।

সব মিলিয়ে হামাস এই বৈঠকের ব্যাপারে কড়া সমালোচনা করেছে। কারণ মাহমুদ আব্বাস এমন সময় ইসরায়েলের সঙ্গে এই বৈঠকে করেছেন যখন গোটা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি অপরাধযজ্ঞ তীব্রতর হয়েছে। সম্প্রতি গাজার ওপর ১১ দিনের যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া ছাড়াও ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতা এবং তাদের জমি ও ঘরবাড়ি দখলও অব্যাহত রেখেছে।

যে সময়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করে আরো জটিল করে দেয়ার হুমকি দেয়; গাজা, পশ্চিম তীর, রামাল্লাহসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ইসরায়েলের হামলায় হতাহত হয়; জেরুজালেমকে মায়েল আদুমিম বসতির সাথে যুক্ত করে ইহুদিদের জন্য আবাসিক ইউনিট তৈরি করতে চায়, সে সময় এ ধরনের তথাকথিত বৈঠকের কোনো উপকারেই আসে না। বরং এতে বিভিন্ন স্বার্থ রক্ষার নামে যে সব শর্ত চাপিয়ে দেয়া হয়, তা খুবই ক্ষতিকর।

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়ে জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এভাবে বহুতল ভবনগুলো ভাঙাকে মানবাধিকারের অনেক গ্রুপই যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধের কারণে সেখানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিদায় নিয়েছে অনেক আগে থেকেই।

হামাস বলছে, মাহমুদ আব্বাস এমন সময় লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সঙ্গে বৈঠক করলেন যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট ঘোষণা করেছেন যে দুই রাষ্ট্র বা সরকার প্রতিষ্ঠার নীতি তিনি মানেন না এবং তিনি যতদিন তার ওই পদে থাকবেন ততদিন কোনোভাবেই এই নীতি বাস্তবায়ন করতে দেবেন না। সেক্ষেত্রে ইসরায়েলের কাছ থেকে আলোচনার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ আদায় যে দুরাশা বা মরীচিকা তা কি আব্বাস জানেন না?

এ অবস্থায় গ্যান্টজের সঙ্গে মাহমুদ আব্বাসের বৈঠককে ফিলিস্তিনি জাতির প্রতি পেছন থেকে ছুরিকাঘাত ও শহীদদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে হামাস ও ইসলামিক জিহাদ দল।

হামাসের আরেক মুখপাত্র আবদুল লতিফ ক্বানুউ বলেছেন, আব্বাস ফিলিস্তিনি জাতির জাতীয় মূল্যবোধগুলোকে এখনো পদদলন করে যাচ্ছেন এবং ইসরায়েলের চেহারা উজ্জ্বল করার ফন্দি করছেন।

অন্যদিকে ইসলামি জিহাদের মুখপাত্র তারেক সালামি বলেছেন, মাহমুদ আব্বাস এমন সময় ইসরায়েলি যুদ্ধ-মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসলেন যখন তার নির্দেশে শহীদ হওয়া ফিলিস্তিনি শিশুদের রক্ত এখনও তাজা।

সূত্র: হারেজ ও টাইমস অব ইসরায়েল