তালেবানের উত্থান: বিশ্বের নজর মধ্য এশিয়ায়

আফগানিস্তান তালেবানের দখলে চলে যাওয়ার পর থেকে বিশ্বের কৌতূহলি নজর এখন মধ্য এশিয়ায়। এ অঞ্চলে তালেবানের বিজয় কি প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে বিশ্বের রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকে সরব রয়েছেন। মূলত রাশিয়া এ অঞ্চলে ব্যাপক প্রভাবশালী হওয়ায় নানা হিসেব-নিকেশ করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কাজাখস্তান ও কিরগিজস্তান নিয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

মানচিত্রে মধ্য এশিয়ার দেশগুলির অস্থান

কাজাখস্তান: মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হলো কাজাখস্তান। সামরিক খাতে দেশটির বাজেট ২.৪ বিলিয়ন ডলার। দেশটি এখন নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ২৫ আগস্ট মধ্য এশিয়ার দেশগুলো রাশিয়ার সঙ্গে এক অনলাইন মনবিনিময় করেছে। কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রেটি অরগানাইজেশন (সিএসটিও) এ সেশনের আয়োজন করে।

অনলাইন সম্মেলনে কাজাখ প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা এবং দেশে অবৈধ অভিবাসী প্রবেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। তিনি আফগানিস্তানে মানবিক ও খাদ্য সংকট মোকাবেলার বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করেন।

তালেবান ক্ষমতায় আসার ছয়দিনের মাথায় এক বিবৃতিতে কাজাখ প্রেসিডেন্ট বলেন, আফগানিস্তান তার দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেকোনো হুমকি দমনে তিনি সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেন। ওই আলোচনায় তিনি আলকায়েদা ও দায়েশ-কে এর হুমকির বিরুদ্ধে সামরিক নিরাপত্তা জোরদারের আহ্বান জানান।

দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানের ব্যাপারে জাতিসংঘের অবস্থানকে তারা সমর্থন করেন। কাবুলে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার তারাও চায়।

উজবেকিস্তান: উজবেকিস্তানের নিরাপত্তার স্বার্থে তালেবানের সঙ্গে দেশটি দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব চলমান রাখতে চায়। দেশটির প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিযোয়েভ বলছেন, আমরা প্রতিদিন তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি। দুই বছর আগে থেকেই উজবেক সরকারের সমর্থন পেতে তালেবান আলোচনা বা সংলাপ করে আসছে।

তিনি এক বিৃবতিতে বলেন, তালেবান নেতা আবদুল গনি বারদার উজবেক সরকারকে হামলা না করার বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়ে আসছেন। দেশটি আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্ক সামরিক অবস্থান রেখেছে। তবে মাঝে মাঝে বন্ধুত্বের স্বীকৃতি হিসেবে দেশটির আফগানের সঙ্গে সীমান্ত খুলে দেয়।

সম্প্রতি উত্তর উজবেকিস্তানের নাভোই প্রদেশ সফর করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। সফরে তিনি বলেন, উজবেকিস্তানে শান্তির জন্য আফগান জনগণের সমর্থন তার দরকার। আফগানিস্তান থেকে সম্প্রতি বহু সরকারি সেনাসদস্য উজবেকিস্তানে আশ্রয় নেয়। দুটি আফগান হেলিকপ্টার তারা গুলি করে ভূপাতিতও করে।

তাকিজিস্তান: তাজিক প্রেসিডেন্ট এমোমালি রাহমন এক বিবৃতিতে বলেন, অন্তর্ভূক্তিমূলক সরকার ছাড়া কোনো সরকারকে তাজিকিস্তান স্বীকৃতি দেবে না। দেশটিতে সক্রিয় সব উপজাতীয় গ্রুপ তালেবান সরকারে স্থান পেতে হবে, বিশেষ করে তাজিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি থাকতে হবে।

২৪ আগস্ট পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ মাহমুদ কুরেশির সঙ্গে এক বৈঠকে তাজিক নেতা বলেন, তালেবানের আগের অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে। ইসলামিক আমিরাত গড়তে হলে সব রাজনৈতিক পক্ষকে নিয়ে সরকার গঠন করতে হবে। গত মাসে সীমান্তে বর্ডার পোস্ট নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে দেশটি।

কিরগিজিস্তান: দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুসলান কাজাকবায়েভ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ থেকে এ অঞ্চলকে রক্ষার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দায়েশ ও আলকায়েদা এ অঞ্চলে অধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরা তা হতে দিতে পারি না।

তিনি বলেন, তালেবানকে অবশ্যই ওই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রমাণ করতে হবে আফগানে তালেবান ও দায়েশের উপস্থিতি নেই। তালেবানের ক্ষমতা দখলের ফলে দেশটি তড়িঘড়ি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। তালেবানের পদক্ষেপের ওপরই সব নির্ভর করছে।

কিরগিজ মন্ত্রী বলেন, তালেবান সংঘাত থামানো ও দেশটির কূটনীতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যে ঘোষণা দিয়েছে তার বাস্তবায়ন চায় উজবেকিস্তান।

তুর্কমেনিস্তান: তালেবান ক্ষমতা দখলের তিন দিন পর ১৮ আগস্ট এক বিবৃতিতে তুর্কমেনিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তালেবানের সঙ্গে তাদের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হচ্ছে এবং সীমান্ত কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইমামনাজার-আকিনা এবং শেরহেতাবাদ-তোরঘুন্দি বর্ডার ক্রসিং দুটি স্বাভাবিকভাবেই চলছে। দু’দেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য অব্যাহত থাকবে।