তালেবানের উত্থানের প্রভাব কি এবার কাশ্মিরে!

পশ্চিমা আগ্রাসনের মুখে ২০০১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতা হারায় তালেবান। দুই দশকের দীর্ঘ লড়াই শেষে গেল মাসের মাঝামাঝি ফের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। এখনও তালেবান সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়নি। তার আগেই পাল্টে গেছে এই অঞ্চলের হিসাব-নিকাশ।

তালেবান যোদ্ধা ও কাশ্মিরের মানচিত্র, ফাইল ছবি

আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলের ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের ওপর। বিশেষ করে, দিল্লি নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মির সমস্যায় তালেবানের উত্থানে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য ভারতীয় ও কাশ্মিরি নেতাদের বক্তব্যেও বিষয়টি ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

ডয়চে ভেলে জানায়, সম্প্রতি কাশ্মিরের এক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটন্যান্ট জেনারেল ডি পি পাণ্ডেকে অতিথি করা হয়। সেখানে কম্যান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করা এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, কাবুল তালেবানের হাতে গেলেও তার কোনো প্রভাব পড়বে না কাশ্মিরে। এই উপত্যকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে ভারতীয় সেনারা।

কাশ্মিরের ভৌগোলিক অবস্থান, ফাইল ছবি

কাশ্মিরি যুবসমাজকে ‘দিকভ্রষ্ট না হয়ে খেলায় অধিক মনোযোগী’ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডি পি পাণ্ডে বলেন, এতে করে তারা ভারতের জন্য আরো অনেক সোনা এনে দিতে পারবে। এরপরই বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তোলেন, তালেবানের প্রভাব যদি কাশ্মিরে না-ই পড়ে, তাহলে কাশ্মিরি যুবকদের বেলায় ‘দিকভ্রষ্ট’ শব্দটি কেন ব্যবহার করলেন সেনা কর্মকর্তা?

ভারতের সরকারি মানচিত্রে জম্মু-কাশ্মিরসহ পাকিস্তান ও চীন নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরকে নিজেদের অংশ হিসাবে দেখানো হয়। সরকারি এই মানচিত্র ছাড়া বাকি সব মানচিত্র অবৈধ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। সেই কাশ্মিরে গত কয়েক মাসে উত্তেজনা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় এক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা।

কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনী, ফাইল ছবি

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, আফগানিস্তান থেকে অন্তত ৬টি গোষ্ঠী জম্মু-কাশ্মিরে প্রবেশ করেছে এরইমধ্যে, তাদের সদস্য সংখ্যা ৫০-৬০ জন। তারা ভারতীয় বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করছে, নিয়মিতভাবে লড়াই-সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এভাবে সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন এলাকায় ব্যস্ত রাখা হচ্ছে, সেই সুযোগে সীমান্তের একাধিক লঞ্চপ্যাডে থাকা গোষ্ঠীগুলো শক্ত অবস্থান গড়ে তুলছে।

এ ছাড়া গত কয়েক মাসে ৫০-৬০ জন কাশ্মিরি যুবক কাজের জন্য বাইরে যাওয়ার কথা বলে লাপাত্তা হয়েছে বলে জানিয়েছে তাদের পরিবার। এ ধরনের ঘটনা এ বছরের শুরু থেকে ফের বাড়ছে বলে জানায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, তালেবানের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের অনেক যুবক। তারা সম্প্রতি ফেরার পর গণসংবর্ধনা দেয়ার ভিডিও ও ছবি আপলোড হচ্ছে সামাজিকমাধ্যমে। ভাইরাল হওয়া এসব ঘটনা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরিদের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করছে। যার প্রভাবে জম্মু-কাশ্মিরেও তালেবানের বিজয় নিয়ে উৎসবের খবর পাওয়া গেছে।

কাশ্মিরি যুবকরা ও ইনসেটে ভারতীয় বাহিনীর হাতে নিহত এক যুবক, ফাইল ছবি

ডয়চে ভেলের সাংবাদিক ও কাশ্মির বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন জেন বলছেন, তালেবানের আগের শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) তাদের বহু যোদ্ধা কাশ্মিরের এসেছেন। তারা সেখানকার স্বাধীনতাকামীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। কাশ্মির সীমান্তে মিছিল করেছেন তালেবান যোদ্ধারা।

গত ২০ বছর আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পরিস্থিতি পাল্টে যায়, তালেবানের পক্ষে আফগান যুদ্ধে যোগ দেয় বহু কাশ্মিরি যোদ্ধা। এখন কাবুলে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ ফের প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এবার তারা কাশ্মিরে ফিরবে। তালেবানের একটি অংশও কাশ্মিরের দিকে ফের নজর দিতে পারে। অতীতের ঘটনাপ্রবাহ সেই কথাই বলছে, সে কারণে ভারতীয় সেনা অফিসার কাশ্মিরি যুবকদের খেলাধুলায় মন দিতে বলছেন বলে জানান সালাউদ্দিন জেন।