বিদেশ যান না শি জিনপিং, স্বাস্থ্যের অবনিত নিয়ে জল্পনা

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিদেশ সফরে অনীহা তার স্বাস্থ্যের অবনতি নিয়ে জল্পনা তৈরি করেছে। শি জিনপিং গত ৬০০ দিন ধরে দেশের বাইরে যাননি। সর্বশেষ গত বছরের ১৮ জানুয়ারি তিনি মিয়ানমার সফরে গিয়েছিলেন। এই বছর তিনি এক ডজনেরও বেশি ভার্চুয়াল সভায় অংশ নিয়েছেন। দ্য সিঙ্গাপুর পোস্ট এই তথ্য জানিয়েছে।

শি জিনপিংয়ের সাম্প্রতিক ছবি

প্রতিবেদনে বল হয়, গত ৯ সেপ্টেম্বর ব্রিকস দেশগুলোর নেতাদের একটি শীর্ষ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশ নেন শি জিনপিং। এ ছাড়া তিনি বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে ৬০০টি টেলিফোন কলে কথা বলেছেন, যার মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন আছেন। এই ঘটনাগুলো চীনা প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে জল্পনা তৈরি করেছে। মনে করা হচ্ছে তাকে সম্ভবত বিদেশ ভ্রমণ এবং মুখোমুখি বৈঠকে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এর আগেও শি জিনপিংয়ের অসুস্থতার কারণে সভা বাতিল ও বক্তৃতা অনুষ্ঠান বিলম্ব করার ঘটনা ঘটেছে।

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী এবং সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকগুলো কোনো কারণ উল্লেখ ছাড়াই বাতিল করা হয়েছিল। সিঙ্গাপুর পোস্ট জানিয়েছে, অনুপস্থিতির সঠিক কারণগুলো কখনও ব্যাখ্যা করা হয়নি। ২০১৯ সালের মার্চে তিনি যখন ইতালি, মোনাকো ও ফ্রান্স সফর করেছিলেন তখন গার্ড অব অনার পরিদর্শন ও স্থানীয় সাইট পরিদর্শনের সময় তিনি সামান্য খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বসার সময় একটি চেয়ারের সহায়তা নেন শি জিনপিং।

শি জিনপিংয়ের আগের ছবি

২০২০ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে শেনজেনে একটি বক্তৃতার সময় শি জিনপিং কাশির প্রকোপে ভুগছিলেন। হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম তার সঙ্গে দূরত্ব নিয়ে বসে কথা বলেন। যদিও কোভিড পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণও হতে পারে এটি। এ ছাড়া শেনজেন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বক্তব্য দেওয়ার সময় নির্ধারিত ছিল সকাল ১০ টায়। তবে এই বক্তব্য দিতে তার দেরি হয়েছিল এবং খুব বেশি কথা বলেননি। এক ঘণ্টার বক্তৃতায় শি খুব ধীরে ধীরে কথা বলছিলেন। ঘন ঘন পানি পান করার বিরতি নিয়েছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে কাশি দিয়েছেন, কারণ কিছু শব্দ উচ্চারণ করতে তার কষ্ট হতো।

এদিকে বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে তার অনীহা চীনের জন্য কূটনৈতিক ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে। কারণ বিদেশ সফরের অনীহার ফলে মুখোমুখি বৈঠকের সম্ভাবনা নেই, যা প্রতিদ্বন্দ্বী বা বিরোধী পক্ষের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করত। সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, শি জিনপিং ব্যক্তিগতভাবে বিদেশি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন না। কোনো বিদেশি প্রধানও চীন সফরে যাচ্ছেন না। যদি কোনো দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীন পরিদর্শন করেন, তারা বেইজিং ছাড়া অন্য শহরগুলো পরিদর্শন করেন। ফলে তাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সাক্ষাতের প্রয়োজন হয় না। এদিকে আগামী অক্টোবরে রোমে অনুষ্ঠিত হতে হওয়া জি-২০ সম্মেলনে শি জিনপিং উপস্থিত থাকবেন কিনা তা নিশ্চিত করা হয়নি।

সূত্র: এএনআই