ভারতের বিরুদ্ধে তোপ দাগালেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী

পাকিস্তান দাবি করেছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারত কমপক্ষে চারটি ভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত। এগুলোর মাধ্যমে ভারত যেমন নিজেদের ভূখণ্ডে ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন করছে, তেমনি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণে ভারত পাকিস্তান বাকযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানের পক্ষে এ কথা বলেন পাকিস্তানি কূটনীতিক সায়মা সেলিম। তিনি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী।

সায়মা সেলিম

তিনি বলেন, ভারতের প্রথম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হচ্ছে, অধিকৃত কাশ্মিরের মানুষকে দমন করার জন্য পরিচালিত সন্ত্রাস। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়ন ও সমর্থন করা। তৃতীয়ত, ভারত এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাড়াটে সংগঠনকে অর্থায়ন ও সংগঠিত করছে। বিষয়টি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন। চতুর্থত, ভারত একটি আধিপত্যবাদী মতাদর্শের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যার মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইসলামোফোবিয়া ও ধর্মান্ধতার মন্ত্র প্রচার করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের প্রতিনিধি বলেন, ভারত আজ অবিশ্বাস্যভাবে অসহিষ্ণু। দেশটিতে সংখ্যালঘু হিসেবে থাকা ২০ কোটি মুসলমান ‘গরু রক্ষীদের’ দ্বারা বারবার অত্যাচারের স্বীকার হচ্ছে। মুসলমানদের বঞ্চনার জন্য বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন এবং মসজিদসহ সমৃদ্ধ মুসলিম ঐতিহ্য ধ্বংস করার জন্য একটি সমন্বিত অভিযান চালাচ্ছে ভারত।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন

সায়মা বলেন, ভারতীয় প্রতিনিধি দল পাকিস্তান সম্পর্কে মিথ্যাচারের মধ্যে লিপ্ত হওয়ার পরিবর্তে তাদের রাজ্যের উদ্বেগজনক গতিপথের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করলে ভালো করবে।

এদিকে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাকিস্তান-ভারতের বাকয্দ্ধু চলছেই। ভারত অধিকৃত কাশ্মিরকে অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে আখ্যায়িত করে। কিন্তু পাকিস্তান এমন বক্তব্যের প্রতিবাদের পাশাপাশি ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ উত্থাপন করে।

সেখানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাষণের পর দেশটির কড়া সমালোচনা করেন ভারতের প্রথম সচিব স্নেহা দুবে। তিনিও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ আনেন। দাবি করেন, অধিকৃত কাশ্মির ও লাদাখ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, আছে ও থাকবে।

এর জবাবে পাকিস্তানি প্রতিনিধি সায়মা সেলিম বলেন, অধিকৃত কাশ্মির ভারতের তথাকথিত অবিচ্ছেদ্য অংশ নয় এবং এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ও নয়। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গণভোটের গণতান্ত্রিক নীতি অনুসারে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণে ভারত-পাকিস্তান বাকয্দ্ধু শুরু হলে পাকিস্তানের পক্ষে এ কথা বলেন সায়মা সেলিম। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই পাকিস্তানি নারী সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী মিশনে কাজ করছেন এবং তাকে পাকিস্তানের হেলেন কেলার আখ্যা দেয়া হয়।

সায়মার ভাষণের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, সায়মা সেলিম দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, কিন্তু তিনি যেভাবে কথা বলেছিলেন, মনে হচ্ছে তার হৃদয় সবকিছু দেখতে পাচ্ছে। প্রিয় সায়মা, আপনি আমাদের গর্বিত করেছেন।