তালেবানের কড়াকড়িতে তিনগুণ বেড়েছে আফিমের দাম!

তালেবান আগের মেয়াদে যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন নিষিদ্ধ ছিল আফিম চাষ। এবারও নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু কৃষকরা জানাচ্ছে, তালেবানের পক্ষে আফিম চাষ পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হবে না। বন্ধ করা সম্ভব না হলেও তালেবানের কড়াকড়িতে ইতোমধ্যেই এই মাদকের দাম তিন থেকে চারগুণ বেড়ে গেছে।

আফগানিস্তানে আফিমের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ

দক্ষিণ আফগানিস্তানের একটি আফিম বাজারের বিক্রেতারা জানান, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে পণ্যটির দাম আকাশছোঁয়া। কান্দাহার প্রদেশের হাওজ-ই-মাদাদের একটি বাজারে নিজেদের আফিমকে শতভাগ খাঁটি দাবি করে মোহাম্মদ মাসুম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা জানি এটা ইসলামে হারাম, কিন্তু আমাদের কোনো বিকল্প নেই।

তারা জানান, ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল দখলের পর থেকে আফিমের দাম তিনগুণ বেড়েছে। আগে যেখানে প্রতি কেজির দাম ছিল সাড়ে সাত হাজার রুপি এখন সেটা ২৫ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে।

পপি ক্ষেত দেখাশোনা করছেন এক আফগান

আফগানিস্তানে মূলত পপি চাষ হয়। সেটি থেকে তৈরি হয় আফিম। এরপর পাকিস্তান বা ইরানে গিয়ে হেরোইনে রূপান্তরিত হয়। পরে আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে গিয়ে বিক্রি হয় অনেক বেশি দামে।

ব্যবসায়ীরা জানান- আবহাওয়া, নিরাপত্তাহীনতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সীমান্ত বন্ধের মতো কারণগুলোতে আফিমের দাম ওঠানামা করে। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তাদের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদের এক বিবৃতির প্রেক্ষিতে দাম দ্রুত বেড়ে যায়। বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, তালেবান মাদক উৎপাদন দেখতে চায় না। কৃষকদের এ ব্যবসা থেকে দূরে রাখতে আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন।

মূলত তার ঘোষণার পর আতঙ্কে পড়ে যায় আফিম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, ক্রেতাদের চাহিদার বিপরীতে ক্রমবর্ধমান ঘাটতির জন্যই আফিমের দাম বাড়ছে।

এদিকে, তালেবান পপি বা আফিম চাষ নিষিদ্ধ করলেও ৪০ বছর বয়সী জাকারিয়া নামের এক চাষী মনে করেন, আফগানিস্তান থেকে এটি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। ২০০০ সালে তালেবান ক্ষমতায় থাকাকালে এটির চাষ নিষিদ্ধের পাশাপাশি ফসলও নির্মূল করে। কিন্তু ২০০১ সালে তালেবানের ক্ষমতাচ্যুতির পর আফিম চাষ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

জাতিসংঘ বলছে, আফগানিস্তানে আফিমের উৎপাদন বছরের পর বছর ধরে উচ্চমাত্রায় রয়ে গেছে। গত বছরেই প্রায় ৬ হাজার ৩০০ টন আফিম উৎপাদন হয় দেশটিতে। এটি আফগানিস্তানের বার্ষিক আয়ে প্রায় ২০০ কোটি ডলার যুক্ত করে।

মাসুম বলেন, আমরা জানি এটা ভালো নয়। কিন্তু আমাদের পর্যাপ্ত পানি বা বীজ না থাকায় আমরা অনেক কিছু করতে পারি না। তাছাড়া অন্য কোনো বাণিজ্যে এর মতো লাভ নেই।

যাকারিয়া নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, আফিম ছাড়া আমার ২৫ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের খরচ বহন করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাহায্য না করলে আমার জন্য অন্য কোনো সমাধান নেই।

কান্দাহারে প্রদেশের সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান মৌলভী নূর মোহাম্মদ সায়ীদ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আফিম উৎপাদন হারাম এবং তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও খারাপ। আমরা এটি বন্ধ করতে চাই। কিন্তু তা আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর নির্ভর করবে। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এগুলোর চাষ না করতে দেয়ার ব্যাপারে একমত হয়, তাহলে আমরাও আফিম চাষ বন্ধ করবো।