কাবুলে সিআইএ’র ভয়ঙ্কর গোপন ঘাঁটি!

সিআইএ আফগানিস্তানে তাদের ছায়াযুদ্ধ চালানোর জন্য ব্যবহৃত গাড়ি, মিনিবাস এবং সাঁজোয়া যান যে ঘাঁটি থেকে ব্যবহার করত তা চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত গোপন রেখেছিল। কাবুল ছাড়ার আগে ঘাঁটিসহ সেগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে তারা। তালেবান সিআইএ’র সেই গোপন আস্তানা সম্প্রতি সাংবাদিকদের দেখিয়েছে।

কাবুলে সিআইএ’র গোপন আস্তানার সব সরঞ্জাম পুড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন সেনারা

সেখানে পুড়ে যাওয়া শত শত ধূসর গাড়ি ও গলিত ধাতুর স্তূপ পড়ে রয়েছে। স্থানটি যেন চকচকে গলিত ধাতুর একটি বিশাল পুকুর। আফগানিস্তান অবজারভারের বরাত দিয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান।

খবরে বলা হচ্ছে, সিআইএ আফগান সাধারণের চোখে ধুলো দিয়ে গোপন আস্তানা গড়ে তুলেছে। ওই গোপন স্থান থেকে তারা যুদ্ধের সবচেয়ে খারাপ ও নির্মম অভিযানগুলো পরিচালনা করত, যা ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা সিআইএ’র ঘাঁটি

এ কাজে তারা পৃথক একটি আধাসামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলেছিল। একটি উঁচু কংক্রিটের প্রাচীর দিয়ে চারপাশ ঢাকা স্থানটি সিআইএ তাদের রাতের বেলার জঘন্য অভিযানের অংশ হিসেবে ব্যবহার করতো।

তালেবান বলছে, সিআইএ’র এই বেজটি ভয়াবহ বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বন্দুক থেকে গ্রেনেড, মর্টার থেকে ভারী আর্টিলারি- যেসব তারা মানুষ হত্যার কাছে ব্যবহার করত সব জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিন সারি শিপিং কন্টেইনার, মানুষকে হত্যা ও নির্যাতন করার সেল- সবকিছু জ্বালিয়ে দিয়ে যায় তারা।

আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা

যখন এগুলো ধ্বংস করা হয় তখন বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, যা কাবুল বিমানবন্দরে রক্তাক্ত বোমা হামলার পরপরই ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছিল রাজধানী কাবুল। বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন।

খবরে বলা হচ্ছে, মার্কিনিদের ২০ বছরের সময়ে সবচেয়ে খারাপ স্থান ছিল সিআইএ’র এই কম্পাউন্ড, যেখানে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে এক ভয়ঙ্কর মিশন বাস্তবায়ন করা হত। এমন কোনো খারাপ কাজ নেই যা তারা এখানে পরিচালনা করেনি। আফগানিস্তানকে শেষ করে দেওয়ার গোপন মিশনে মত্ত ছিল তারা।

বিমানবন্দরের দুই বর্গমাইল উত্তর-পূর্ব দিকে বিস্তৃত পাহাড়ি সেল তৈরি করা হয়েছিল যা কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এই সেল নির্যাতন ও হত্যার জন্য কুখ্যাত হয়ে উঠেছিল, সিআইএ’র কোড নামে যেটি ‘কোবাল্ট’ নামে পরিচিত ছিল। সেখানে আটক থাকা বন্দিরা এটিকে ‘অন্ধকার কারাগার’ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ সেখানে কোনো আলোর ব্যবস্থা ছিল না। কেবল প্রহরীদের ব্যবহৃত হেডল্যাম্প থেকে মাঝে মাঝে আলোকচ্ছটা সেখানে প্রবেশ করত।

খবরে বলা হচ্ছে, এখানেই ২০০২ সালে গুল রহমান নামে এক বন্দিকে নির্যাতন করা হয়েছিল যা সিআইএ প্রকাশ করেছে। ওই বন্দিকে দেওয়ালে নগ্ন করে বেঁধে হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রায় রেখে হত্যা করা হয়। ২০১৪ সালে সিআইএ’র এক নির্দেশনায় ঘটনা প্রকাশ পেয়েছিল।

সিআইএ’র আস্তানাটি দুই দশক ধরে সুরক্ষিত ও কঠোর গোপনীয় ছিল। কেবলমাত্র স্যাটেলাইট ফটোতে এটি দৃশ্যমান ছিল বলে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সাক্ষ্য দ্বারা জানা গেছে। তালেবানের বিশেষ বাহিনী সম্প্রতি সাংবাদিকদের জন্য গোপন এ ঘাঁটি খুলে দেয়।

তালেবানের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বদরি-৩১৩ ইউনিটের কমান্ডার মোল্লা হাসনাইন বলেন, আমরা দেখাতে চাই যে তারা কীভাবে তাদের জিনিস নষ্ট করেছে যা আমাদের দেশ গড়তে ব্যবহার করা যেতে পারত।

কিন্তু তারা গাড়ি, বাস, সাঁজোয়া যান সবই পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, এখন বদরি-৩১৩ বাহিনী তাদের নিজস্ব সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য সিআইএর ঘাঁটিটি ব্যবহার করবে। এখানে সাংবাদিকদের এটাই প্রথম ও শেষ প্রবেশ বলে জানান তিনি।