আশরাফ ঘানির পলায়ন, সেদিন কী ঘটেছিল

আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি গত আগস্টে উজবেকিস্তান হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। প্রথমে তিনি একটি হেলিকপ্টার এবং পরে কাজাখস্তানের একটি বিমান ব্যবহার করে আমিরাতে পৌঁছান। ঘানির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে আফগানিস্তানের ডেইলি হাশতে সুবহ খবরটি প্রথমে প্রকাশ করে। পত্রিকাটির রেফারেন্স দিয়েছে রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা তাস।

আশরাফ ঘানি

খবরে এক বর্ণনাকারী বলছেন, ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুলে প্রবেশের কিছুক্ষণ আগে ঘানি তার উপদেষ্টা এবং দেহরক্ষীদের সাথে বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টারে করে রাজধানী ত্যাগ করেন। উজবেকিস্তানের তেরমেজে চারটি হেলিকপ্টার অবতরণ করে। ৫৪ যাত্রীর মধ্যে ২২ জন ছিলেন পাইলট, সহপাইলট এবং বিমান বাহিনীর টেকনিশিয়ান। বাকিরা রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষী এবং তাদের কারোই পাসপোর্ট ছিল না।

বিমানটি যখন তেরমেজে অবতরণ করে, তখন ঘানি ও তার স্ত্রী রুলা ঘানি জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান হামদুল্লাহ মুহিব, রাষ্ট্রপতি প্রশাসনের প্রধান ফজল মাহমুদ ফজলী এবং অন্যান্য সঙ্গীদের সাথে আমাকে বিমানবন্দরে ৩১ ঘণ্টা কাটাতে হয়। আমাদের নিরাপত্তায় ছিল ২০০ উজবেক সেনা।

১৬ আগস্ট রাতের খাবারের সময় ৬০ আসনের একটি ছোট সাদা বিমান, যেটির কোনো ট্রেডমার্ক নেই, তেরমেজ বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তারপর আমরা সবাই ক্ষুধার্ত পেট, তৃষ্ণার্ত মুখ, শোচনীয় অবস্থা এবং জটলা চুল নিয়ে বিমানটিতে উঠে পড়ি। বিমানের ভেতরটা স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছিল এবং প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের জন্য কোনো বিশেষ কেবিন ছিল না।

তারা ককপিটের কাছের আসনে বসেন এবং আমিসহ অন্যরা পেছনের আসনে বসি। কেউ কথা বলছিল না এবং কেউ জানত না কোথায় যাচ্ছি। কয়েক মিনিট পরে বিমানটি উড্ডয়ন করে এবং ঘোষণা করা হয়, আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছি। বিমানের ভিতরে ২৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রথমবারের মতো আমরা কিছু পানি ও খাবার পাই।

ফ্লাইটারডার প্লেন ট্র্যাকিং সার্ভিসের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, কাজাখস্তানের ফ্লাইজেটের একটি বিমান এফজেকে-১২৫৫ ফ্লাইটটি ১৬ আগস্ট স্থানীয় সময় ২৩টায় তেরমেজ বিমানবন্দর থেকে আবুধাবির উদ্দেশে উড্ডয়ন করে। এতে ঘানি এবং আরো ৫৩ জন আরোহী ছিলেন। সাড়ে তিন ঘণ্টা পর বিমানটি আবুধাবি বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

বিমানের গেট খোলার সাথে সাথে বেশ কয়েকজন আরব পুরুষ আশরাফ গনি এবং হামদুল্লাহ মুহিবকে অভ্যর্থনা জানায়। তারা প্রেসিডেন্টসহ কিছু আফগান কর্মকর্তাকে নিয়ে যান। ফজল মাহমুদ ফজলি, রুলা ঘানি এবং তাদের ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করা হয়।

ঘটনার বর্ণনাকারী বলছেন, আশরাফ ঘানি বিমানবন্দর ত্যাগ করার পর থেকে আমি তাকে বা অন্য কর্মকর্তাদের দেখিনি। পাইলট, কো-পাইলট এবং হেলিকপ্টার টেকনিশিয়ানসহ বেশ কিছু সঙ্গীর কাছে সামরিক আইডি ছাড়া অন্য কোনো কাগজপত্র ছিল না।

‘তাদেরকে মার্কিন বাহিনী দ্বারা সম্প্রতি আফগানদের জন্য স্থাপিত আবুধাবির একটি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। আমিসহ অন্যরা প্রত্যেকে নিজস্ব পথে চলে যাই।’ বলেন ওই বর্ণনাকারী।