পানামা পেপারস থেকে প্যান্ডোরা পেপারস, বিশ্বনেতাদের আতঙ্ক!

পাঁচ বছর আগে বিশ্বে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল ‘পানামা পেপারস’। বিশ্বের বাঘা বাঘা রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রপ্রধানসহ নানা ক্ষেত্রের শীর্ষ স্তরের মানুষগুলোর আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ করে দেয়া হয়েছিল সে সময়। এর ফলে ওই সময়ে কিছু কিছু দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায়ও অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। পাঁচ বছর পরে এসে আবারো প্রকাশিত হয়েছে একই রকমের ‘প্যান্ডোরা পেপারস’।

প্যান্ডোরা পেপারসে নাম এসেছে পুতিনসহ আরো অনেকের

গতকাল রোববার রাতে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস বা আইসিআইজে এক কোটি ১৯ লাখ ফাঁস হওয়া নথি প্রকাশ করে। প্যান্ডোরা পেপারর্স নামের ওই নথিগুলোতে বিশ্ব নেতাদের ‘আর্থিক গোপনীয়তা’ প্রকাশ করা হয়। এখন পর্যন্ত এ ধরনের যতগুলো নথি ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর মধ্যে প্যান্ডোরা পেপারর্স সবচেয়ে বড়। বিশ্বের ১১৭টি দেশের ১৫০ মিডিয়া আউটলেটের ছয় শতাধিক সাংবাদিক এর পেছনে কাজ করেছেন।

প্যান্ডোরা পেপারস অনুসারে, নথিতে যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৩৫ জন বিশ্বনেতা রয়েছেন। জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চেক প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেই বাবিস, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ আরো অনেক নেতার গোপন সম্পদের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

প্যান্ডোরা পেপারস

জানা গেছে, জর্ডানের রাজা গোপনে যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি সম্পত্তির সাম্রাজ্যে ১০ কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করেছেন। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার স্ত্রী লন্ডনে একটি অফিস কেনার সময় ৩ লাখ ১২ হাজার পাউন্ড কর স্ট্যাম্প শুল্ক বাঁচিয়েছেন। কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা এবং তার পরিবার অফশোর কোম্পানিগুলোতে তিন কোটি ডলারের বেশি স্থানান্তর করেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদাইমার জেলেনস্কি ঘোষণা না করেই বিদেশে ব্যবসা থেকে উপকৃত হওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য জটিল অফশোর ব্যবস্থা ব্যবহার করেছেন। চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ বাবিস ২০০৯ সালে একটি অফশোর কোম্পানি ব্যবহার করে ফরাসি রিভেরায় ৯ দশমিক ৪ একরের একটি মনোরম বাড়ি কিনেছিলেন।

বিবিসি প্যানোরামা, ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এবং আরো কিছু মিডিয়া অংশীদার মিলে বিশ্বের ১৪টি কোম্পানির এই ১ কোটি ২০ লাখ দলিলপত্র হাতে পেয়েছে। আর এ দলিলপত্রগুলো উদ্ঘাটন করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস।

বিবিসি জানায়, অফশোর কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারী হিসেবে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সাবেক ও বর্তমান ৩৫ জন নেতা এবং তিন শতাধিক সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। ৯০টির বেশি দেশের এসব কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রী, বিচারক, মেয়র ও সেনাবাহিনীর জেনারেল। আরো আছেন শতাধিক বিলিওনিয়ার, বিভিন্ন ক্ষেত্রের জনপ্রিয় ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা।