‘তবুও’ একই দিনে তিন ধর্মের শান্তিপূর্ণ উৎসব

সম্প্রতি কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআন শরিফ রাখাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে হামলা, মূর্তি ভাঙচুর এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে যখন দেশে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে, তখন একই দিনে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হলো তিন ধর্মের ধর্মীয় উৎসব। এ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্বল নিদর্শন দেখা হচ্ছে।

ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বুধবার রাজধানীতে শোভাযাত্রা

আজ বুধবার, ২০ অক্টোবর, দেশের মুসলমান, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করেন। এর মধ্যে মুসলমানরা সারাদেশে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করেন। অপরদিকে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পালন করেন কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার উৎসব। এ ছাড়া একই দিন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে।

ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সমাবেশে হাজার হাজার মুসলিম অংশ নেন। এই সমাবেশ থেকে আন্তঃধর্মীয় ঐক্য বজায় রাখার শপথ নেওয়া হয়। সমাবেশে অংশ গ্রহণকারীরা হাত তুলে শপথ করেন যে, ধর্মীয় উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে মেনে নেওয়া হবে না। শপথবাক্য পরিচালনা করেন মাইজভান্ডারি দরবার শরীফের বর্তমান নেতা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ।

সমাবেশে দেশের আলেম ও সুফিদের পাশাপাশি মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, বিদেশি কূটনীতিক ও সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, তথ্যমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-মহাসচিব ড. হাছান মাহমুদ, কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর (অব.) জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ ফরিদুল হক খান পীরগঞ্জ থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ সমাবেশে বলেন, কুরআন ও মহানবী (সা.) এর অনুসারী তথা মুসলিমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বাধ্য। কারণ কুরআন ও হাদিসে অন্য ধর্মের উপাসনালয়ে হামলাকে হারাম করা হয়েছে। নতুন করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে— এমন যেকোনো মন্তব্য না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

অন্যদিকে, দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এদিন বার্ষিক কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা উদযাপন করেন। প্রতিদিনের প্রার্থনার মতোই পূজাটি তাদের নিজ নিজ গৃহে উদযাপন করা হয়। এ ছাড়া দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকরা বুধবার বুদ্ধের অহিংস শিক্ষার বাণী আলোচনার মাধ্যমে বার্ষিক প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করেন।

এ বিষয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা কাজল দেবনাথ গণমাধ্যমকে বলেন, তিন ধর্মের ধর্মীয় উৎসব একই দিনে একই স্থানে উদযাপন একটি কাকতালীয় ব্যাপার। তবে এই কাকতালীয় ঘটনাকে আমি আন্তঃধর্মীয় ঐক্য সমুন্নত রাখার ইঙ্গিত হিসেবে দেখি। কারণ সবাই একই স্রষ্টার সৃষ্টি আমরা। তিনিই আমাদের সবার প্রভু। এই ঘটনা থেকে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের চেতনায় আমরা অনুপ্রাণিত হতে চাই।