ধর্মঘটেও চলবে পরীক্ষা, ভোগান্তিতে ভর্তিচ্ছু-চাকরিপ্রার্থীরা

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে আজ শুক্রবার সকাল থেকে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন মালিক-শ্রমিকরা। বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি কেন্দ্রীয়ভাবে পরিবহন মালিক সমিতিও অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে, একাধিক ভর্তি পরীক্ষাসহ বেশ কিছু চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা আজ। এ অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন ভর্তিচ্ছু-চাকরিপ্রার্থীরা।

ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা, ফাইল ছবি

জানা গেছে, আজ ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ‘বাণিজ্য’ ইউনিট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি-১’ ও ‘ডি-১’ উপ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ২৬ প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আগামীকাল শনিবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তির মূল লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।

আজ যেসব নিয়োগ পরীক্ষা
আজ শুক্রবার সকালে যেসব নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, কর কমিশনারের কার্যালয়, কর অঞ্চল-১৪, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, শ্রম আদালত, সিলেট; বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, খাদ্য অধিদপ্তর, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নিয়োগ পরীক্ষা।

বাস ধর্মঘট, ফাইল ছবি

আর বিকেলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে সমন্বিত সাত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমি, শ্রম আদালত, সিলেট (দ্বিতীয় শিফট), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (দ্বিতীয় শিফট) এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের (দ্বিতীয় শিফট) পরীক্ষা।

পরীক্ষার্থীরা এসব পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দ্বিধান্বিত থাকলেও পরীক্ষা স্থগিতের কোনো খবর এখন পর্যন্ত তারা পাননি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত, বাস না চললেও শুক্রবারের নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষাগুলো ঠিকই অনুষ্ঠিত হবে। একাধিক নিয়োগ কর্তৃপক্ষ বলছে, পরীক্ষার তারিখ আগে থেকেই নির্ধারণ করা আছে। হঠাৎ করে বাস ধর্মঘটের ঘোষণা এলেও পরীক্ষা পেছানোর সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব আজিজুর রহমান বলেন, অনেক আগেই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছু নেই। পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমানের বক্তব্যও একই ধরনের। অনেক আগেই পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। হঠাৎ করে ধর্মঘটের ঘোষণা এলো। পরীক্ষা বাতিল চাইলেই সম্ভব নয়। কারণ এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত- যোগ করেন তিনি।

পরীক্ষার্থীরা যা বলছেন
রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্রে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে আশিকুজ্জামানের। তিনি বলেন, আমার কোথাও চান্স হয়নি। অনেক আশা নিয়ে সাত কলেজে আবেদন করেছি। এটাই আমার একমাত্র ভরসা। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়।

অন্যদিকে চাকরিপ্রত্যাশীরা জানান, বেকার জীবনে তারা এমনিতেই পরিবারে বোঝা হয়ে আছেন। করোনা মহামারি শেষে নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হলেও একাধিক পরীক্ষা একই সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় তারা কোনো একটিকে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। শুক্রবারও এমন বেশ কিছু পরীক্ষা রয়েছে। এর মধ্যে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হলে কেন্দ্রে যাতায়াত করতে গিয়ে তাদের বিপাকে পড়তে হবে।

রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের মার্কেটিং বিভাগ থেকে মাস্টার্স করা কল্লোল সাহা বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন চাকরির পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি। কাঙ্ক্ষিত সেই পরীক্ষা এখন শুরু হয়েছে। সকালে একটি এবং বিকেলে একটি নিয়োগ পরীক্ষা আছে আমার। কিন্তু হঠাৎ করে ধর্মঘটের ঘোষণা আসায় কীভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।