সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা, যুক্তরাজ্যের তীব্র নিন্দা হামাসের

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। দেশটি জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদ আইনের আওতায় হামাসকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করা হবে। এর ফলে কেউ হামাসের প্রতি সমর্থন জানালে আইন ভঙ্গ করা হবে। তাতে ফৌজদারী শাস্তির মুখেও পড়তে হবে অভিযুক্তকে। যুক্তরাজ্যের এমন সিদ্ধান্তে ইসরায়েল খুশি হলেও এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে হামাস।

হামাস যোদ্ধা ও যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল

এক বিবৃতিতে হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনিদের জীবনের বিনিময়ে হলেও ইসরায়েলের আগ্রাসনের পক্ষপাতী। যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে তাদের পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া বা নিজেদের সংশোধনের পরিবর্তে আগ্রাসনকারীদের সমর্থন করছে। ফিলিস্তিনিদের ভূমি তারাই ইহুদিদের দিয়ে দিয়েছিল।

হামাস দাবি করে, সশস্ত্র পন্থাসহ সম্ভাব্য সব উপায়ে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা নির্যাতিতদের জন্য আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সিদ্ধ অধিকার।

টহল দিচ্ছে হামাস বাহিনী

হামাসের নিষেধাজ্ঞা সংবলিত ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সংগঠনটি জানায়, ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল, ঘর-বাড়ি ভাঙচুর এবং গাজা উপত্যকায় ২০ লাখের বেশি মানুষকে অবরুদ্ধ করে রাখাই আসল ‘সন্ত্রাসবাদ’। বিবৃতিতে তারা যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন এবং আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বন্ধ করার আহ্বান জানায়। পাশাপাশি হামাস তাদের সমর্থকদের যুক্তরাজ্যের পদক্ষেপের নিন্দা করার আহ্বান জানিয়েছে।

এর আগে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল ইহুদি জনগণের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ এবং ইহুদি বিদ্বেষের সাথে যোগসূত্রের অভিযোগে হামাসকে নিষিদ্ধ করবেন বলে ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, হামাসের উল্লেখযোগ্যভাবে সন্ত্রাসী সক্ষমতা ও তাদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। তাই আমি হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার কাজ করছি। সন্ত্রাসবাদ আইনের অধীনে হামাসকে নিষিদ্ধ করা হবে। যদি কেউ গোষ্ঠীটিকে সমর্থন করে, তাদের পতাকা ওড়ায় বা কোনো সমাবেশ করে তাহলে তাদের সন্ত্রাসবাদ দমন আইনে বিচার করা হবে। আগামী সপ্তাহে পার্লামেন্টে প্রস্তাবটি তোলা হবে।

২০০১ সাল থেকে যুক্তরাজ্য হামাসের সশস্ত্র শাখা-ইজদুদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আখ্যায়িত করে। তবে এতদিন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোকে এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছিল। এখন হামাসকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে যুক্তরাজ্য। এর আগে হামাসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট যুক্তরাজ্যের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে টুইটারে দাবি করেন, হামাস একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। এ সংগঠনকে সম্পূর্ণভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য যুক্তরাজ্যের ইচ্ছাকে আমি স্বাগত জানাই।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল আগামী সপ্তাহে দেশটির সংসদে হামাসকে নিষিদ্ধের বিলটি উত্থাপন করবেন। তিনি গোষ্ঠীটিকে তীব্রভাবে ইহুদিবিরোধী বলে অভিহিত করেছেন। ইহুদি সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য এটি প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হামাস মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা। যেটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই করে আসছে।