বিএসএফে অতিষ্ঠ সীমান্তবাসী, এলাকা ছাড়ার চিন্তা

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের দায়িত্ব সীমান্ত ঘিরে। কিন্তু তারা সীমান্তবাসী মানুষের চলাফেরা, চাষাবাদ, বিয়ে-শাদি, এমনকি ঘর থেকে বেরিয়ে বাথরুমে যাওয়ার ওপরেও যেভাবে নজরদারি চালায়, তাতে রীতিমত অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এ কারণে অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বিএসএফের তল্লাশি

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণার সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামের মানুষজন জানান, তারা কীভাবে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই বিএসএফ সদস্যদের নজরদারিতে থাকেন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রত্যেকটি কাজেই তাদের তদারকি চলে। সেইসাথে লাগে বিএসএফের অনুমতিও। মাঠে গরু নিয়ে যেতে লাগে অনুমতি, বাজার থেকে তরকারি কিনতে গেলে পড়তে হয় তল্লাশির মুখে। এমনকি প্রসূতি নারীর পেট কেন ফুলে আছে, সে প্রশ্নেরও জবাব দিতে হয় সীমান্তবাসীদের!

ওই অঞ্চলের স্বরূপনগর এলাকার হাকিমপুরের তারালি গ্রামের বাসিন্দা মেহেরুন্নিসা গাজি বলেন, বিএসএফ সদস্যরা যখন তখন বাড়ির ভেতর দিয়ে চলাফেরা করে। এ ব্যাপারে কারো অনুমতি নেয় না। বাড়িতে নারীরা আছে, মেয়ে বউরা আছে। কিন্তু এসবে কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই বিএসএফ কর্মীদের।

সীমান্তে বিএসএফের টহল

পেট্রাপোল সীমান্তের কাছাকাছি কালিয়ানি নামের একটা গ্রামের বাসিন্দা শর্মিলা সরকারের অভিযোগ আরও মারাত্মক। তিনি বলেন, বিএসএফের ডিউটি করার কথা বর্ডারে। কিন্তু তারা নজর রাখে আমাদের বাড়ির ওপর। এমনকি কেউ রাতে বাথরুমে যাওয়ার সময়ও টর্চ মেরে দেখে, কে যাচ্ছে। রাতে ঘুমিয়েও তাদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না। বেড়ার গায়ে আঘাত করে তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়।

শর্মিলা সরকার বলেন, সবসময়ে আমাদের দেখছে, নজরদারিতে রাখছে। কিন্তু তারপরও যদি রাস্তায় বের হই তাহলে বিএসএফের টিটকারির মুখে পড়তে হয়। তারা জিজ্ঞাসা করবেই, ও বৌদি! কোথা থেকে এসেছেন, বাংলাদেশ থেকে নাকি?

এসব এলাকায় বিয়ে-শাদীর মতো অনুষ্ঠান অবশ্যই বিএসএফকে জানিয়ে করতে হয়। আগে থেকেই ক্যাম্পে জানাতে হয়। বিএসএফের কড়া নজরদারির কারণে বাইরের লোক এসব জায়গায় আজকাল আত্মীয়তা করতে চায় না। তাই গ্রামের মধ্যেই বিয়ে শাদি সারতে হয়।

এসব এলাকার মানুষ আফসোস করে বলেন, নিজেদের ভূখণ্ডে থেকেও আমাদের সব সময় পরিচয়পত্র নিয়ে চলতে হয়। নইলে যে কোনো সময় তারা মামলা ঠুকে দেয়। স্থানীয় রুহুল আমিন সর্দার বলছিলেন, বিএসএফের কারণে রাস্তায় বের হওয়াই কঠিন। অহেতুক চেক করবে, বাঁকা কথা বলবে। ওদের পছন্দ না হলে মাদক বা নারী কেসে জেলে ঢুকিয়ে দেবে।

সম্প্রতি বিএসএফের এখতিয়ারের এলাকা জিরো লাইনের ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত করার প্রতিক্রিয়ায় সীমান্তবাসী বলেন, আমরা এতদিন যে নিপীড়ন সয়েছি, অন্যরাও এবার তার ভাগ পাবে।