বড় ধরনের উন্নতি বা অবনতি নেই খালেদা জিয়ার

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ‘লিভার সিরোসিসের’ সমস্যা জটিল হওয়ায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট নালিতে তিন দফা রক্তক্ষরণের কারণে তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে গত রোববার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মেডিকেল বোর্ড। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চতুর্থ দফা রক্তক্ষরণ হলে মৃত্যুঝুঁকি আরো বেড়ে যেতে পারে বলে দ্রুত বিদেশে পাঠানোর সুপারিশ করেন তারা।

হাসপাতালে খালেদা জিয়া, ফাইল ছবি

তবে গত দুদিন ধরে করোনা জয়ী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা নিশ্চিত করেছেন আজ বৃহস্পতিবার। তারা বলছেন, বিএনপি নেত্রীর শারীরিক অবস্থার আশান্বিত উন্নতি অথবা আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটেনি এখনো। এভাবে এক অবস্থায় স্থির থাকার বিষয়টিকে ভালো বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ফলে হাইলি টেকনিক্যাল ‘টিপস’ চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে দ্রুত বিদেশে পাঠানোর তাগিদ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এটি করা না গেলে যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন তিনি- মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে এমন শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে বলে জানান খালেদা জিয়ার ঘনিষ্টজনরা।

হাসপাতালে খালেদা জিয়া, ফাইল ছবি

একই ধরনের তথ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্ত একজন চিকিৎসক বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে তার শারীরিক অবস্থা একটু স্বাভাবিক। এই অবস্থা কত সময় স্থায়ী হবে, সেটি বলা যাচ্ছে না। বয়সসহ অন্যান্য রোগের কারণে যেকোনো সময় তার শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যেতে পারে, সেটি সামাল দেয়া এবার কঠিন হয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, দেশের চিকিৎসকরা তাদের সম্ভব সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন তার শরীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য। কিন্তু তারা প্রযুক্তিগত সুবিধা না থাকায় দ্রুত বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। এখন সরকার অনুমতি না দেয়ায় তাকে বিদেশে নেয়া যাচ্ছে না। এটি মেনে নেয়া যায় না, তার চিকিৎসার্থে বিদেশে পাঠানো সরকারেরই দায়িত্ব।

মানুষের জান বাঁচানো ফরজ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, একজন মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচালে মহান আল্লাহও খুশি হন। সরকার কেন খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে চাইছে না, সেটি বোধগম্য নয়। আমরা তার দ্রুত সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

এর আগে খালেদা জিয়ার লিভারে তিন বার রক্তক্ষরণ হয়েছে উল্লেখ করে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী বলেন, বর্তমানে তার রক্তক্ষরণ বন্ধ আছে। তবে আবারো রক্তক্ষণের ঝুঁকি রয়েছে, সেটা হলে তা সামাল দেয়া কঠিন হবে। ব্লিডিং হয়ে মৃত্যুঝুঁকি আরো বেড়ে যাবে।

এই রোগের চিকিৎসার প্রযুক্তি বাংলাদেশ তো নয়ই, ভারতীয় উপমহাদেশেও নেই বলে জানান ডা. এফ এম সিদ্দিকী। তিনি জানান, এমন চিকিৎসা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির সুনির্দিষ্ট কিছু সেন্টারে সম্ভব। এখনই সেই চিকিৎসা করা না গেলে এবং তার অবস্থা খারাপ হলে বিদেশে নেয়া সম্ভব নাও হতে পারে।

খালেদা জিয়াকে গত ১৩ নভেম্বর সিসিইউতে নেয়ার পর মাসের শেষ দিকে এসে তিনি ‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে’ রয়েছেন বলে জানানো হয়। ফলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার দাবিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার এবং রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। তাতেও সাড়া না পেয়ে একই দাবিতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি।