স্বাধীনতার ৫০ বছর: গণতন্ত্র ও রাজনীতির ভবিষ্যতই বড় চ্যালেঞ্জ

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ও নেতিবাচক ভাবমূর্তি পাল্টেছে বহুভাবে। গত ৫ দশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র তকমা থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতি হয়েছে, এর সঙ্গে গণতন্ত্রের প্রশ্নও আলোচনায় উঠছে এখনো। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘গণতন্ত্র সম্মেলন’-এ নিমন্ত্রণ না পাওয়াকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইমেজ সংকটের বড় দৃষ্টান্ত বলে বর্ণনা করছেন অনেকে। গণতন্ত্র এবং রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে থাকা ইমেজ সংকট থেকে বেরিয়ে আসাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

স্বাধীনতার মাসে বাংলাদেশের পতাকা বিক্রি করা এক হকার, ফাইল ছবি

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক আলোচিত হয়েছে, যা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবেদনটিতে একাধিক বিশ্লেষকের মতামত তুলে ধরা হয়েছে, তারা বিভিন্নভাবে বিষয়টি দেখার চেষ্টা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি বিশ্বে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সাফল্য এবং ভূ-রাজনীতিতে ভবিষ্যত অবস্থানের প্রশ্ন গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ক্রমাগত পেছনের দিকে যাওয়া আর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সাফল্য বহির্বিশ্বে আলোচিত হচ্ছে।

বিশেষ করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নাগরিক অধিকারগুলো সংকুচিত, মানবাধিকার পরিস্থিতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের এখনকার পরিস্থিতিকে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান স্বৈরতন্ত্রও বলছে।

আশির দশকে স্বৈরতন্ত্রের কবলে পড়ে বিদেশি সাহায্য নির্ভরতা, দীর্ঘ সময় ধরে দুর্নীতিতে শীর্ষে অবস্থান করে বাংলাদেশ। এই ভাবমূর্তি বদলাতে সময় লেগেছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, বাংলাদেশের উন্নতি এবং উজ্জল ভাবমূর্তি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে একটা দুর্বলতা রয়েছে। প্রথম থেকে অত্যন্ত দরিদ্র দেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ছবি দেখানো হতো।

তবে ৮০-৯০ এর দশকের মধ্যেই সামাজিক সমস্ত উন্নয়নের সূচকে অনেকটাই এগিয়েছে বাংলাদেশ। এখনো আগের মতো ভাবমূর্তি থাকলেও গত ১০-১৫ বছরে ক্রমাগত জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ার কারণে সবার নজরে এসেছে দেশটি। এখন ইমেজ হচ্ছে- ডেভলপমেন্ট মিরাকল এবং ডেভলপমেন্ট প্যারাডক্স বা উন্নয়নের একটা ধাঁধাঁ, বলছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত এনে দেয়া বাংলাদেশের অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে- জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দেয়া, তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে উঠে আসা, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য।

এর বাইরে ভারতের সহায়তায় স্বাধীনতা লাভের পরেও সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভূ-রাজনীতিতে নিজস্ব ভাবমূর্তি তৈরি করেছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন ধরনের চাপ থাকা সত্ত্বেও সবার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে এগিয়ে যাওয়ায় অনেকের নজরে এসেছে এদেশ। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকট দেখা দিয়েছে গণতন্ত্রের প্রশ্নে, বলছেন রওনক জাহান।

১৯৯১-২০০৬ পর্যন্ত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলের কথা তুলে ধরে তিনি বলছেন, পরে দুই বছরের মিলিটারি ব্যাক গর্ভমেন্টের আন্ডারে থাকার পর গণতান্ত্রিক নির্বাচন ফেরত আসে। ২০১৪ সালেরর পর থেকে সব দলের অংশগ্রহণে সেরকম নির্বাচন হচ্ছে না। প্রথম থেকে গণতন্ত্রিক পদ্ধতিতে সবার ঐক্য করা যায়নি। এই ইমেজ কিছুদিন ভাল আবার কিছুদিন খারাপ ছিল।