কাশ্মিরে প্রিয়জনের মরদেহের অপেক্ষায় থাকে পরিবার!

নভেম্বরের এক শীত শীত সন্ধ্যায়, ভারত-শাসিত কাশ্মিরে দুই ব্যক্তির পরিবার স্বজনের মৃতদেহের জন্য অপেক্ষা করছিল। দ্বিতীয়বার তাদের দাফন করবেন পরিবারের সদস্যরা। প্রথমবার দাফন করেছিল নিরাপত্তা বাহিনী। জঙ্গি আখ্যা দিয়ে মেরে ফেলার পর বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে নিয়ে গিয়ে তাদের দাফন করা হয়।

স্বজনের লাশের অপেক্ষায় এক কাশ্মিরি পরিবার

আলতাফ ভাট এবং মুদাসির গুলকে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল জঙ্গি বলে। কাশ্মিরের রাজনৈতিক দলগুলো এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এর সাথে যুক্ত হয় স্থানীয়দের বিক্ষোভ। বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি আলোড়ন তৈরি হলে তারা ওই দুটি মরদেহ তুলে পরিবারের কাছে ফেরত দিতে রাজি হয়। অধিকৃত কাশ্মিরের জন্য যা ছিল বিরল একটি ঘটনা।

কাশ্মিরে এ ধরনের কথিত বন্দুকযুদ্ধে কাউকে হত্যার পর সাধারণত জবাবদিহি করতে হয় না। কারণ তাদেরকে জঙ্গি তকমা লাগিয়ে দেয়া হয়। কখনো বলা হয়, তারা পাকিস্তান থেকে এসেছে। কখনোবা বলা হয়, যাদেরকে মারা হয়েছিল তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের সদস্য। এ অবস্থায় কারও পক্ষে নিহতের স্বজন দাবি করাটাই কঠিন হয়ে ওঠে।

এক কাশ্মিরিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী

নিহত আলতাফ ভাটের বড় ভাই আব্দুল মজিদ ভাট ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ৩০ বছরে কেউ ন্যায়বিচার পায়নি। আমরা কীভাবে সেটা আশা করব? ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মিরিদের প্রতি বাড়াবাড়ির অভিযোগ চলছে। গত ৩০ বছরে শত শত বেসামরিক লোককে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

আগস্ট ২০১৯-এ জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যকে দুটি ফেডারেল শাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। এরপর থেকে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সাম্প্রতিক বিবৃতিতে বলেছে, ২০১৯ সাল থেকে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী নিয়মিত হয়রানি, চেকপয়েন্টে দুর্ব্যবহার, নির্বিচারে আটক, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ নানা ধরনের অপরাধের সাথে যুক্ত।

২০১৭ সালে মুহাম্মদ আহসান উন্টু কাশ্মিরের মানবাধিকার কমিশনের কাছে একটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন। তাতে ১৯৮৯ সাল থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমস্ত তদন্তের বিশদ জানতে চেয়েছিলেন। এক বছর পরে তিনি উত্তর পেয়েছিলেন- ১৯৮৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৫০৬টি অনুসন্ধানের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে কেবল একটি আলোর মুখ দেখেছিল।

আগে এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পর মৃতদেহ পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া হতো। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করে কথিত জঙ্গিদের মৃতদেহ পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সে সময় তারা দেখতে পায় নতুন এ ব্যবস্থার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আন্দোলন আর দানা বেঁধে উঠতে পারেনি। ফলে করোনা কমে আসলেও ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মরদেহ ফেরত দেয়ার আগের সেই অবস্থানে ফেরত আসেনি।

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অধিকৃত কাশ্মিরের সেই গ্রেপ্তার-হত্যা এখনো বন্ধ হয়নি। কাউকে ধরে নিয়ে গেলে, তাকে জীবিত ফেরত পাওয়ার আশা প্রায় অসম্ভব। সেক্ষেত্রে কাশ্মিরিরা প্রিয়জন নয়, তাদের মরদেহের জন্যই অপেক্ষা করতে থাকে।