আপনি পড়ছেন

দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা আর শহুরে জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে এই ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন মেঘ,পাহাড় আর অরণ্যের সম্মিলনে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান থেকে। পাহাড়ী আকাবাঁকা রাস্তা, গহীন অরণ্য আর মাথার ওপর উড়ে বেড়ানো মেঘমালা আপনাকে দেবে মানসিক প্রশান্তি। বান্দরবানের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মুহুর্তেই ভুলিয়ে দেবে নাগরিক জীবনের একঘেয়েমি আর মানসিক অবসাদ।

bandorban bogalake

বান্দরবানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে বিশেষ বিশেষ কিছু দর্শনীয় স্থানে। সেই দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়েই আজকের এ আয়োজন।

নীলাচল

bandorban nilachol

বান্দরবান জেলা শহরের খুব কাছেই নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র অবস্থিত। শহর থেকে চান্দের গাড়িতে করে নীলাচল যেতে সময় লাগবে ১৫-২০ মিনিট। পাহাড়ের উপর অবস্থিত নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র থেকে পুরো বান্দরবান শহর দেখে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য। এছাড়াও নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের ওপর থেকে দৃশ্যমান দূরের পাহাড়ী জনপদগুলো সত্যিই খুব মনোমুগ্ধকর।

নীলগিরি

বান্দরবানের সবচেয়ে আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩২০০ ফুট উপরে অবস্থিত নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত হয়। নীলগিরি যেতে হলে আপনাকে চান্দের গাড়ি ভাড়া করতে হবে। শহর থেকে ৩-৪ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে যখন নীলগিরিতে এসে পৌঁছবেন ততক্ষণে আপনি নিজেকে আবিষ্কার করবেন মেঘের রাজ্যে। হাত দিয়ে মেঘ ছুঁয়ে দেখার অনুভূতি কেবল নীলগিরিতেই পাওয়া সম্ভব।

bandorban nilgiri

নীলগিরিতে রাত্রিযাপন করতে চাইলে আপনাকে থাকতে হবে সেনাবাহিনী পরিচালিত কটেজ অথবা তাবুতে। এক্ষেত্রে আগে থেকে যোগাযোগ করে যাওয়াটাই ভাল। তাবুর ভাড়া পড়বে প্রতি রাতে ১০০০ টাকা। নীলগিরিতে মেঘের সৌন্দর্য উপভোগ করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে ভোরবেলা। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে চোখ মেললেই আপনি নিজেকে আবিষ্কার করবেন সত্যিকার এক মেঘের রাজ্যে। নিচে পাহাড়ের ভাজে ভাজে মেঘ, মাথার উপর মেঘ আর মাঝখানে আপনি! এ এক অভুতপূর্ব দৃশ্য। পাহাড়ের উপর থেকে যেদিকেই তাকাবেন মনে হবে মেঘের সমুদ্র।

বগালেক

বান্দরবানের সবচেয়ে দূর্গম কিন্তু আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র বগালেক। বান্দরবানের রুমা উপজেলা থেকে ৩৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দূর্গম পর্যটন কেন্দ্র যেতে হলে আপনাকে পারি দিতে ভয়ংকর দূর্গম পাহাড়ী পথ। চান্দের গাড়িই বগালেক যাওয়ার একমাত্র বাহন। তবে বৃষ্টির দিন হলে আপনাকে হাটতে হবে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার।

Bandarban boga lek

সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে দূর্গম রাস্তাটাই বগালেক যাওয়ার রাস্তা। একটু অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষের জন্য বগালেক হতে পারে ভ্রমণের আদর্শ জায়গা। তবে দূর্বল চিত্তের কারো বগালেক না যাওয়াটাই উত্তম। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে আপনাকে ক্লান্ত শরীরেই পায়ে হেঁটে উঠতে হবে প্রায় ১০৭০ ফুট খাঁড়া পাহাড়ি পথ। ট্র্যাকিং এর সময় অবশ্যই আপনাকে সাথে রাখতে হবে বাঁশের লাঠি, যা পাহাড়ে উঠার আগে নিচেই কিনতে পারবেন।

মনে রাখবেন, বগালেকের স্থানীয় সুস্বাদু খাবার কোনভাবেই যেন মিস না হয়ে যায়। বগালেক যাওয়ার আগে অবশ্যই স্থানীয় গাইড ঠিক করে নিতে হবে। বগালেক থেকে ৮ ঘণ্টার পায়ে হাঁটা পথ বেয়ে আপনি ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ কেওক্রাডং। কেওক্রাডং যেতে পথে পড়বে চিংড়ি ঝর্ণা। যা আপনাকে অন্যরকম শিহরণ দেবে।

যেভাবে যাবেন

ঢাকার কলাবাগান, সায়েদাবাদ, কমলাপুর বাস স্টেশন থেকে থেকে প্রায় প্রতিদিনই ছেড়ে যায় শ্যামলী, হানিফ, বি আর টি সি, সৌদিয়া, সোহাগ পরিবহনসহ বিভিন্ন কোম্পানির বাস। ভাড়া ৫৫০-৬৫০ টাকা মধ্যেই। এছাড়া এই সবগুলি পরিবহনেরই এসি বাস বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসি বাসের ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকার মধ্যে।আপনি চাইলে ট্রেনেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রথমে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম, তারপর সেখান থেকে বান্দরবান বাসে করে যেতে হবে। বান্দরবান শহর ঘুরে বেড়াতে হলে আপনাকে ভাড়া করতে হবে চান্দের গাড়ি, ভাড়া দূরত্ব ভেদে জনপ্রতি ৫০ থেক ১০০ টাকা।

যেখানে থাকবেন

বান্দরবান শহরে অসংখ্য হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট রয়েছে। থাকার জন্য আগে থেকে বুকিং দিয়ে গেলে সুবিধা। শহরের মধ্যে হোটেল হিল ভিউ, হোটেল প্লাজা, হোটেল সাঙ্গু, ভেনাস রিসোর্ট, হিল সাইড রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য। ভাড়া ৫০০-১০০০ টাকা জনপ্রতি। এছাড়াও বগালেকে স্থানীয় আদিবাসী গোষ্ঠীদের পরিচালিত কাঠের তৈরী কটেজ রয়েছে, যার ভাড়া ১৫০ টাকা, থাকতে পারবেন ১০-১২ জনের মতো। চাইলে বগালেকে আপনি স্থানীয় পাহাড়ীদের আতিথেয়তাও নিতে পারেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

ঈদের ছুটিতে ঘোরাঘুরি

ঈদের ছুটি কাটান রিসোর্টে

ভারত ভ্রমণের কথা: সূর্যের আলোয় বদলে যায় তাজমহলের রঙ

ভিসা ছাড়াই ঘুরে আসুন ভুটান

চলে আমার হাওয়ার গাড়ি উইড়া উইড়া