পর্দার মুন্নি নয়, ৪০ বছর পর পরিবার খুঁজে পেল বাস্তবের মুন্নি

চার দশক আগে তাকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল নয়া দিল্লিতে। তারপর মানবপাচারকারীরা তাকে ভারত থেকে পাঠিয়ে দেয় পাকিস্তানে। সময়ের পরিক্রমায় সেখানে তিনি সংসার পেতেছেন, স্বামী সংসার নিয়ে ভালোই আছেন। তবুও মনের কোণে আকাঙ্ক্ষা ছিল, কোনোদিন যদি পরিবারের খোঁজ পেতেন! মুন্নির সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে, ভারতের মুরাদাবাদে থাকা তার পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এখনো সশরীরে তাদের সাক্ষাৎ হয়নি।

বজরঙ্গি ভাইজানের মুন্নি ও করাচির আসল মুন্নি

ডিসেম্বরের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে মুন্নি তার পরিবারের সাথে মিলিত হওয়ার আকুতি জানিয়েছিলেন। ওই ভিডিওতে তিনি দাবি করেছিলেন, তার বাড়ি ছিল ভারতের মুরাদাবাদ শহরে। এমনকি সেখানে তিনি তার গ্রামের বর্ণনার পাশাপাশি প্রতিবেশীদের নামও বলেছিলেন।

সেই ভিডিও কাজে দিয়েছে। নির্দিষ্ট ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া গেছে তার স্বজন। তার ভাই আকরাম বলেন, অনেক পাল্টে যাওয়ায় আমি শুরুতে আমার বোনকে চিনতে পারিনি। কিন্তু তিনি গ্রাম ও পরিবারের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই যে তিনিই আমার বড় বোন।

ভাইয়ের সাথে কথা বলছেন মুন্নি

আকরাম বলেন, তিনি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন যে তার একটি বড় বোন ছিল। পরে ভিডিও দেখে তার মনে পড়ে প্রায় ৪০ বছর আগে যখন তিনি ছোট ছিলেন, তখন মুন্নি নামের তাদের এক বোন নিখোঁজ হয়েছিল। তার বাবা দুই বছর ধরে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। তারপর ব্যর্থ হয়ে তারা তাকে মৃত বলে ধরে নেয়।

মুন্নি জানান, মামা আমাকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। আমি তার সাথে গিয়েছিলাম। কারণ আমি তাকে চিনতাম এবং সে জানিয়েছিল, আমাকে দিল্লি নিয়ে যাবে এবং কয়েক দিনের মধ্যে ফিরিয়ে আনবে। পরে ওই অবস্থাতেই তাকে পাকিস্তান পাচার করে দেয়া হয়। মুন্নি বলেন, তাকে এ অবস্থা থেকে উদ্ধাকারী পাকিস্তানি নাগরিক সাজ্জাদ হায়দারকে বিয়ে করেছেন।

বিয়ের পর নাম পাল্টে বুশরা রাখা এই নারী বলেন, আমি এখন ভালোই আছি। আমার চার সন্তান। কিন্তু আমি সবসময় আমার পরিবার- আমার বাবা, ভাই-বোনদের সঙ্গে সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। সব কিছু আমার মনে ছিল না, তবে আমাদের এলাকা এবং আমাদের বাড়ির আশেপাশে থাকা লোকজনের কথা ভুলিনি।

এত বছর পর হারানো বোনকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত আকরাম জানান, এখন প্রায় প্রতিদিনই আমরা টেলিফোনে কথা বলি। কথা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলতে থাকে এবং কান্নার মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়। আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আমার বোনের জন্য একটি ভিসা ইস্যু করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি, যাতে সে আমাদের সাথে দেখা করতে ভারতে আসতে পারে।

কয়েক বছর আগে ভারতে মুক্তি পাওয়া ব্লকবাস্টার মুভি বজরঙ্গি ভাইজানের সাথে এ ঘটনার অনেকখানি মিল আছে। ওই চলচ্চিত্রে পবন কুমার চতুর্বেদী (সালমান খান) ছয় বছর বয়সী মুন্নিকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পাকিস্তানে যান। মানবিক আবেদনের কারণে চলচ্চিত্রটি ব্লকবাস্টার হয়েছিল।