প্যাংগংয়ে চীনের সেতু নির্মাণ, অসহায় স্বীকারোক্তি ভারতের

লাদাখ সীমান্তে দ্রুত সেনা পাঠানোর লক্ষ্যে প্যাংগং লেকের উপরে সেতু তৈরি করছে চীন। গত কয়েকদিন আগে এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও ভারতের প্রতিরক্ষা বা পররাষ্ট্র বিভাগ এ নিয়ে এক রকম চুপই ছিল। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়েছে। তবে সেটিকে কার্যত অসহায় স্বীকারোক্তি হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ, তাতে ওই স্থাপনা বন্ধের নির্দেশ বা বন্ধ না করলে কী পরিণতি হতে পারে, সে বিষয়ে তেমন কোনো কথা বলা হয়নি।

প্যাংগং লেকের উত্তর-দক্ষিণের অংশে সংযোগের জন্য সেতু নির্মাণ করছে চীন

ওই সেতু নির্মাণের ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, প্যাংগং লেকে চীনের পক্ষ থেকে একটি সেতু তৈরির খবর সামনে এসেছে। এ বিষয়ে তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে কেন্দ্রের। প্রায় ৬০ বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে রাখা এলাকায় চীন সেতুটি বেআইনিভাবে নির্মাণ করছে। জায়গাটি চীন দখল করে থাকলেও ভারত কখনো তা মেনে নেয়নি। দেশের স্বার্থ যাতে কোনোভাবে ক্ষুণ্ণ না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকার সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে।

ভারতের এমন মৃদু প্রতিবাদের মধ্যেই চীন আরো উদ্যমের সাথেই বিতর্কিত এসব এলাকাতে নিজেদের পরিধি বাড়চ্ছে। গতকাল শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন দাবি করেন, চীন নিজের এলাকার মধ্যেই অধিকারবলে পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে। ভারত-চীন সীমান্তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখা এবং চীনের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার জন্যই এসব কাজ করছে চীন।

সীমান্ত নিয়ে ভারত-চীনের টানাপড়েন অনেকদিনের

ছয় দশক আগে, ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের সময় প্যাংগং হ্রদের বড় অংশসহ লাদাখের আকসাই চীনের বিস্তীর্ণ এলাকার দখল নিয়েছিল ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’। প্যাংগং হ্রদের উত্তর এবং দক্ষিণ অংশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য এখন সেখানে একটি সেতু এবং সেতুর পাশাপাশি একটি সংযোগরক্ষাকারী রাস্তাও তৈরি করছে চীন। এর ফলে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার বিস্তীর্ণ অংশে দ্রুত সেনা, অস্ত্র ও রসদ পাঠাতে পারবে তারা।

উল্লেখ্য, চীন ভারত সীমান্তে উত্তেজনা সব সময়ই ছিল। তবে ২০২০-এ বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। এতে ভারতীয় বাহিনী নাস্তানাবুদ হয়। চীনের পক্ষ থেকে সেসব ঘটনার ছবি ও ভিডিও মাঝে মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

এদিকে, চীন বেশ কয়েক মাস ধরে বিতর্কিত এসব অঞ্চলে নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। কখনো এসব অঞ্চলে গ্রাম তৈরি করছে, কখনো নতুন নামকরণ করছে, আবার কখনো প্যাংগংয়ের মতো এলাকায় সেতু নির্মাণ করছে। আবার কখনো নিজেদের পতাকা উড়িয়ে ভারতকে উত্তেজিত করতে চাইছে।

ভারত অন্যসব সীমান্তে বেশ কঠোর হলেও চীনের ব্যাপারে অনেকটা নমনীয়ভাবেই জবাব দিচ্ছে। ‘ভারত বেআইনি এসব কাজ সমর্থন করে না, এর দ্বারা স্থিতিশীল পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে’-এসবের মাধ্যমেই নিজেদের প্রতিবাদ সেরেছে। কখনো আবার বেমালুম অস্বীকারও করছে চীনের এসব পদক্ষেপের কথা।