ওসি প্রদীপের সকল রাষ্ট্রীয় পুরস্কার-পদক বাতিলের আবেদন

দেশব্যাপী আলোচিত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত কক্সবাজারের টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। তার সকল রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ও পদক বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মৌখিক আবেদন করা হয়েছে আজ রোববার।

সিনহা মো. রাশেদ খান ও প্রদীপ কুমার দাশ, ফাইল ছবি

এদিন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় আবেদনটি করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম। এ সময় প্রদীপের বিরুদ্ধে ২০৪ জনের বেশি নিরীহ মানুষ বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার অভিযোগ করেন তিনি। জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা।

পিপি ফরিদুল আলম আদালতকে বলেন, ওসির চেয়ারে বসে নরপিশাচের মতো আচরণ করেছেন প্রদীপ, ভয়ে তার অপরাধ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনি। সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানকে চরম নির্যাতন করা হয়, যা প্রদীপের অপেশাদারী আচরণের প্রমাণ। প্রদীপের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ধর্ষণেও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে তার রাষ্ট্রীয় পুরস্কার-পদক বাতিল করা উচিত।

আদালতে প্রদীপ কুমার দাশ, ফাইল ছবি

এ মামলায় ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন জানিয়ে তিনি আরো জানান, সাক্ষীদের জেরা শেষে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ৩৪২ ধারায় লিখিত বক্তব্য দেন ১৪ আসামি, পরদিন দেন অপর আসামি নন্দ দুলাল। পরে আসামিদের বক্তব্য পর্যালোচনা এবং আসামিদের আলাদাভাবে সরাসরি সওয়াল-জবাব করা হয়।

সে সময় ধার্য করা তারিখ অনুযায়ী, আজ রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়, যা বুধবার পর্যন্ত চলবে। মামলার অভিযুক্ত ১৫ আসামির উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন পিপি ও আইন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ রেজাউর রহমান।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রসিকিউর ফরিদুল আলম বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে মামলার বিচারকাজের শেষ ধাপে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। এটি শেষ হলেই রায় ঘোষণা করা হয়, সে হিসাবে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সময়ক্ষেপণ না করলে এ মাসের শেষের দিকে রায় আসতে পারে।

এর আগে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার সাক্ষ্যগ্রহণ দুই ধাপে চলে, তাতে রোমহর্ষক বর্ণনা দেন সাক্ষীরা। পরে সাক্ষ্য নিয়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের গণমাধ্যমে কথা বলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এ মামলায় ১৫ জন সাক্ষীকে তলব করা হলেও ২৩-২৫ আগস্ট মামলার বাদী ও সফরসঙ্গীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়।

গত বছরের ২৭ জুন সিনহা হত্যা মামলার ১৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত।

টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে বিতণ্ডার এক পর্যায়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। পরে গত ৫ আগস্ট নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্ত করার জন্য র‌্যাবকে আদেশ দেন আদালত। প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও প্রদীপসহ ৭ পুলিশ সদস্য গত ৬ আগস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম সে বছরের ১৩ ডিসেম্বর প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলার অন্যতম অভিযুক্ত প্রদীপ কুমারের অন্যতম সহযোগী কনস্টেবল সাগর দেব ঘটনার শুরু থেকেই পলাতক ছিলেন। অবশেষে গত বছরের ২৪ জুন আত্মসমর্পণ করেন তিনি।