আদালতের অনুমতি নিয়ে জনসমক্ষেই মৃত্যুকে ‘বরণ’

কলম্বিয়ার বাসিন্দা ভিক্টর এসকোবার দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের জটিল রোগে আক্রান্ত। সবকিছুতেই তাকে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে হতো। কৃত্রিমভাবে শ্বাস নিতে হতো, হুইলচেয়ার ছাড়া নড়াচড়া করতে পারতেন না। বলতে গেলে যন্ত্র ও পরিবারের সদস্যদের সাহায্যেই বেঁচেছিলেন তিনি।

ভিক্টর এসকোবার

এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়েছিলেন। আদালত পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে অনুমতি দিয়েছিল। অনুমতি পেয়ে আত্মীয়দের উপস্থিতিতে মৃত্যুকে ‘বরণ’ করে নেন তিনি। চিকিৎসকের প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশনে হাসিমুখে সকলকে বিদায় জানিয়ে অন্য জগতের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান ৬০ বছর বয়সী ভিক্টর। তার আইনজীবী টুইট করে জানান, কলম্বিয়ার ক্যালি শহরে চিকিৎসকদের উপস্থিতিতেই স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেছেন ভিক্টর এসকোবার।

মারা যেতে হবে- এ নিয়ে তার মধ্যে কোনো কষ্ট দেখা যায়নি বরং এভাবে চলে যেতে পারায় তার মধ্যে দেখা গিয়েছিল স্বস্তির হাসি। এভাবে মৃত্যুবরণকে জীবনের জয় বলেছেন ভিক্টর। কারণ প্রাত্যহিক অসহনীয় কষ্টের জীবন থেকে অনন্ত মুক্তিই তো চেয়েছিলেন তিনি। অন্তিম ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আত্মীয়দের মাঝখানে হাসিমুখে থাকা ভিক্টরের মধ্যে কোনোরকম অস্থিরতা দেখা যায়নি। এরপরেই তাকে উপস্থিত চিকিৎসক প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন দেন।

অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারতেন না ভিক্টর এসকোবার

মারা যাওয়ার আগে নিজের মন্তব্যগুলোর ভিডিও রেকর্ড করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। ভিডিওতে ভিক্টর বলেন, একটু একটু করে সকলেরই একদিন ফেরার সময় আসবে। তাই আমি আজ বিদায় বলব না বরং বলব, আবার দেখা হবে! তিলে তিলে আমরা সকলেই তো একদিন ঈশ্বরে সমাপ্ত হব।

গোটা বিশ্বেই স্বেচ্ছামৃত্যু (অনেকের ভাষায় আত্মহত্যা) নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। একজন মানুষের অবস্থা বিশেষে স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার থাকা উচিত কি-না তা নিয়ে উভয় পক্ষেই ব্যাপক যুক্তি রয়েছে। তারপরও ১৯৯৭ সালে কলম্বিয়া সরকার বাইরের কোনো কিছুর (যেমন প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশনে) সাহায্যে স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকারকে বাতিল করেছিল। এক্ষেত্রে ভিক্টর একটি জটিল রোগে ভুগছিলেন। বেঁচে থাকতে হলে অন্যের উপর নির্ভর করে কৃত্রিমভাবে শ্বাসগ্রহণ করে বেঁচে থাকতে হতো তাকে। ফলে আদালতে ভিক্টরের আবেদন বিশেষ বিবেচনায় সম্মতি লাভ করে।

তবে ভিক্টর এসকোবারের স্বেচ্ছামৃত্যু আরেকদিক থেকে নজিরবিহীন। কারণ কলম্বিয়াই প্রথম দেশ, যারা একজন রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানকে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিল। সাধারণত ক্যাথলিক চার্চগুলো আত্মহত্যার তীব্র বিরোধী। এর ফলে ভিক্টরের এই মৃত্যু বস্তুত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিরুদ্ধেই গেল।