মার্কিনিদের আবর্জনা ফেরত পাঠালেন আফগান শিল্পী

২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে অবস্থান করেছিল মার্কিন সেনারা। সে সময় বাগরাম বিমানঘাঁটি আফগানিস্তানে প্রধান মার্কিন সামরিক ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত হত। আজিজ হাজারা নামের একজন আফগান শিল্পী সেই বাগরাম বিমানঘাঁটি থেকে সংগ্রহ করা ২০ টন আবর্জনার একটি চালান যুক্তরাষ্ট্রের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল এক রিপোর্টে এ তথ্য জানিয়েছে।

আজিজ হাজারা

চালানটি ভারত মহাসাগর ও আটলান্টিক অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরবে। কাবুল ও বার্লিনে কাজ করা হাজারা দ্য ন্যাশনালকে বলেন, আবর্জনার এ যাত্রা গন্তব্যে পৌঁছতে এক বছর সময় লাগবে। আফগানিস্তানে পৌঁছার সময় মার্কিন সেনা ও তাদের সামরিক সরঞ্জামের বহর যেসব শহর-বন্দর অতিক্রম করেছিল, চালানটি সেসব শহর-বন্দর অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছবে।

হাজরা চালানটিকে ‘মার্কিন জনগণের জন্য উপহার’ বলে অভিহিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত তাদের আবর্জনা এশিয়াতে পাঠালেও সেখানে যেহেতু আবর্জনা আমদানির বিরুদ্ধে বিশেষ আইন রয়েছে, তাই চালানটিকে কৌশলে শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করে পাঠানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গে প্রতি তিন-চার বছর অন্তর কার্নেগি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি শিল্প প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এ বছরের সেপ্টেম্বরে সেটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আজিজ হাজারা ওই প্রদর্শনীর নামে আবর্জনার চালানটিকে লিপিবদ্ধ করেছেন।

মার্কিন সেনাদের ফেলে যাওয়া বাগরাম বিমানঘাঁটি

হাজারা দ্য ন্যাশনালকে বলেন, চালানটি পৌঁছে গেলে সেটা আমেরিকানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। একবার আমেরিকার হয়ে গেলে এটিকে আর ফিরিয়ে দিতে পারবে না।

দ্য ন্যাশনাল জানায়, ২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাগরাম বিমানঘাঁটিতে লক্ষাধিক মার্কিন সেনা অবস্থান করেছে। সেখানে একটি শপিং সেন্টার ও ফাস্টফুড রেস্তোরাও ছিল। কিন্তু বিষাক্ত প্লাস্টিক, স্ক্র্যাপ মেটাল ও ইলেকট্রনিক বর্জ্য মিলে সেটি এখন আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। বিমানঘাঁটিটিসহ পুরো আফগানিস্তান এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে।

আজিজ হাজারা ১৯৯২ সালে ওয়ারদাক প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই তার পরিবার কাবুলে চলে আসে। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ এবং মার্কিন আগ্রাসনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীর জীবন হাজারার জীবনে অনেক স্মৃতি যেমন জমা করেছে, তেমনি তার মধ্যে তৈরি করেছে বৈশ্বিক একটি দৃষ্টিভঙ্গি। তাই তিনি বলেন, কাবুলের শৈশবের অংশ যেন একটি হরর শো। আবার অন্যদিকে আমাদের জন্য যুদ্ধ এতটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে, আপনি এটি দূর থেকে না দেখলে বুঝতে পারবেন না।