যুদ্ধের গতিপথ পাল্টে দিচ্ছে তুরস্কের ড্রোন!

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি যুদ্ধে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে তুরস্কের তৈরি ড্রোন। ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই সম্ভাবনার মধ্যেও এটি তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। জানা গেছে, তুরস্কের তৈরি কয়েক ডজন ড্রোন এরই মধ্যে ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আঙ্কারা ও কিয়েভের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেনের কারখানাতেই তৈরি হবে তুরস্কের ডিজাইন করা ড্রোন। সব মিলিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের ড্রোন হয়ে উঠছে অন্যতম বড় নিয়ামক। খবর বিবিসির।

ড্রোন উৎপাদনে জোর দিয়েছে তুরস্ক

তুরস্কে বসবাসরত স্বাধীন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরদা মেভলুতোগলু বলছেন, তুরস্ক সরকার গত ২০ বছরে একটা শক্তিশালী ড্রোন বাহিনী গড়ে তুলেছে। তারা তুরস্কের ভেতরে-বাইরে, কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী পিকেকের বিরুদ্ধে ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি থেকেই নিরাপত্তা কার্যক্রমে ড্রোন ব্যবহার করে আসছে।

গত বছরের শেষ দিকে নাগর্নো কারাবাখে ৪৪ দিনের যুদ্ধে আর্মেনিয়ার সৈন্য, সামরিক যান, কামান এবং বিমান-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায় আজারবাইজানের সেনাবাহিনী। এর সহায়তায় তারা কিছু বিতর্কিত ভূখণ্ড পুনর্দখল করতে সক্ষম হয়।

তুরস্কের তৈরি বায়রাক্টার টিবিটু ড্রোন

আরদা মেভলুতোগলু আরো বলেন, তুরস্কের দুটি প্রধান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল বা মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ড্রোন) তৈরি করে। বায়কার ডিফেন্স নামের প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করে বায়রাক্টার টিবিটু এবং বায়রাক্টার আকিনচি মডেলের দুটি ড্রোন। এগুলোর ব্যাপক চাহিদা। আর টার্কিশ অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের অধীনে তৈরি হয় টিএআই আংকা এবং টিএআই আকসুংগুর।

তুরস্ক ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইউক্রেনের কাছে অনেকগুলো বায়রাক্টার টিবিটু অস্ত্রবাহী ড্রোন বিক্রি করেছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইউক্রেন সফরে যান এবং ড্রোন ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি করেন। বিষয়টি নিয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, চুক্তির ফলে তুরস্কের উৎপাদনকারীদের জন্য ইউক্রেনে একটি ড্রোন কারখানা স্থাপনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর ফলে ইউক্রেনেই ড্রোন নির্মিত হবে।

আরদা মোভুতোগলু মন্তব্য করেন, ইউক্রেনের জন্য ডনবাস অঞ্চলে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে এই টিবিটু ড্রোন অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হতে পারে। ড্রোনটিতে অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির ইলেকট্রো-অপটিক্যাল ক্যমেরা আছে। তার সাথে আছে ডাটা-লিংক সিস্টেম এবং দুই থেকে চারটি পর্যন্ত বিস্ফোরক- যা প্রিসিশন-গাইডেড অর্থাৎ উড়ে গিয়ে নির্ভুল নিশানায় লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে। এই সক্ষমতা বিশেষ করে সচল লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানার জন্য খুবই কার্যকর, বিশেষ করে ডনবাস এলাকায় যুদ্ধরত মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে।

ধারণা করা হয় যে এ পর্যন্ত ১৫টিরও বেশি দেশ তুরস্কের তৈরি বায়রাক্টার ও টিএআই ড্রোন কেনার জন্য অর্ডার দিয়েছে। নিকট অতীতে সিরিয়া ও লিবিয়ার সংঘাতে এবং অতিসম্প্রতি নাগর্নো কারাবাখের যুদ্ধে বায়রাক্টার টিবিটু ড্রোনের কার্যকর প্রয়োগ দেখা গেছে। এর পরপরই এই ড্রোনের চাহিদা বেড়ে গেছে।

গত বছরের মে মাসে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, তারা তুরস্কের কাছ থেকে ২৪টি সশস্ত্র ড্রোন কিনবে। এর ফলে পোল্যান্ডই হতে যাচ্ছে প্রথম ন্যাটো দেশ যারা তুর্কি ড্রোন কিনছে। এছাড়া আফ্রিকার বাজারে তুরস্ক এখন চীনের উৎপাদকদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। সামরিক বিশ্লেষকদের মন্তব্য, তুরস্কের ড্রোনের দাম কম কিন্তু এসব অস্ত্রবাহী ড্রোনের পারফরম্যান্স ও মান ন্যাটোর সমপর্যায়ের।