সেনা কর্মকর্তা ও আইজিপির আত্মীয় পরিচয়, কামিয়েছেন কোটি টাকা

রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে ভুয়া সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক ও অর্থ আত্মসাৎকারী এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকের নাম- সালাউদ্দিন ভূঁইয়া।

প্রতারক সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব

র‍্যাব জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গার্মেন্টস এক্সেসরিজ কোম্পানির নিকট ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে টাকা পরিশোধ না করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। প্রতারক সালাউদ্দিন ভূঁইয়া নিজেকে বিভিন্ন কোম্পানির সিইও, মার্কেটিং ম্যানেজার, মার্চেন্ডাইজার পরিচয় দিতেন। 

এর মাধ্যমে বিভিন্ন গার্মেন্টস কোম্পানির নিকট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য ক্রয়ের জন্য ক্রয়পত্র বিতরণ করতেন। ভুয়া ক্রয়াদেশ প্রাপ্ত হয়ে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ কোম্পানিগুলোর ক্রয়াদেশ অনুযায়ী সম্পূর্ণ পণ্য ডেলিভারি করে।

পরবর্তীতে সালাউদ্দিন ভূঁইয়া পণ্য ডেলিভারি পাওয়ার পর তাদের টাকা পরিশোধ না করে সেই পণ্যগুলো বিভিন্ন কোম্পানির নিকট বিক্রি করে দেয়। ভুক্তভোগীরা তার নিকট থেকে পাওনা টাকা ফেরত চাইলে টাকা না দিয়ে উল্টো তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে। নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, আইজিপির আত্মীয়, সাংসদের আত্মীয় ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে।

এ বিষয়ে গত ৫ ফেব্রয়ারি ভুক্তভোগী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান র‌্যাব-১ এর নিকট আইনি সহায়তা কামনা করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব-১ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর মহাখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক এ এম এম সালাউদ্দিন ভূঁইয়াকে (৫৫), চাঁদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে।

র‍্যাব আরও জানায়, অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত বাঁধাইকৃত একটি ফটোফ্রেম, সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত গেঞ্জি, ক্যাপ, মানিব্যাগ ও মেডেল, ৪ টি জাল লেটার প্যাড, একটি জাল সীল, ২টি জাল ক্রয়াদেশ, ২টি জাল সোয়াচ প্যাড, ২টি চেক বই, ৩টি মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন কন্টেন্ট এবং নগদ ৯ হাজার ৮৩০ টাকা জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত সালাউদ্দিন বিভিন্ন প্রতারণার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উয়িং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গ্রেপ্তারকৃত সালাউদ্দিন ভূঁইয়া গত প্রায় ৫ বছর ধরে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে আসছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, সে কোটি টাকার অধিক আত্মসাৎ করেছে। গত ৩ মাস ধরে মহাখালীর একটি অফিসে সাবলেট ভাড়া নিয়ে এই কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সে।

সালাউদ্দিন কোনো ঠিকানায় ৬ মাসের বেশি অবস্থান করেন না। এছাড়া ফটোশপ এর মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি এডিট করে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে থাকে।

ইতোপূর্বে তার নামে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে আদালতে মামলা ও বিভিন্ন থানায় ৩টি অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানের মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছে র‍্যাব।