শরীফের বিরুদ্ধে ১৩ অভিযোগের ব্যাখ্যায় যা বলল দুদক

বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলে সাড়া জাগানো দুর্নীতি দমন কমিশন, দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ বা সতর্ক না করে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এতে দুদক প্রশ্নের মুখে পড়ায় অবশেষে উত্থাপিত ১৩টি অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়েছেন সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

শরীফ উদ্দিন ও মাহবুব হোসেন

আজ রোববার দুদকের কনফারেন্স রুমে বসে শরীফকে নিয়ে গণমাধ্যমে একপেশে সংবাদ পরিবেশনেরও অভিযোগ তোলেন সচিব মাহবুব। এ সময় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই অপসারণ কেন করা হলো- জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

যে ১৩ অভিযোগের ব্যাখ্যা এসেছে

১. অনুসন্ধান বা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া মাত্র দুদকের নির্দেশিকা না মেনে নিজের খেয়াল-খুশি মতো সেটি করা। ২. অনুসন্ধান বা তদন্তের সময় অভিযোগের সঙ্গে সরাসরি জড়িত না থাকা বহু লোককে নোটিশ বা টেলিফোনে ডেকে হয়রানি করা। ৩. অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে কারো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার ক্ষেত্রে আইন ও বিধির তোয়াক্কা না করা এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানানো।

দুদক ভবন, ফাইল ছবি

৪. দুদককে পাশ কাটিয়ে, আদালতের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তোয়াক্কা না করে ১৫টি ব্যাংক হিসাব লিখিতভাবে এবং মৌখিকভাবে ৮টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা। ৫. কক্সবাজারে র‌্যাবের অভিযানে সার্ভেয়ারের বাসা থেকে ঘুষের ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করা হয়, যা কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে এক বছর নিজের হেফাজতে রাখা।

৬. এক মামলায় ভুক্তভোগীকে নির্মমভাবে নির্যাতনের বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, এমন বহু অভিযোগ থাকা। ৭. কর্মকাল ৩ বছর পার হওয়ায় অন্য ২০ জনের সঙ্গে বদলি করা হয়, যা সবাই হাইকোর্টে রিট করে সেটি স্থগিতের চেষ্টা করা। ৮. জনস্বার্থে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করার একমাস পর যোগদান করে দুদকের আদেশ অবজ্ঞা করা এবং কর্মস্থল ত্যাগের সময় সকল রেকর্ডপত্রসহ নথিপত্র বুঝিয়ে দেওয়ার বিধান অমান্য করা।

৯. জনৈক ব্যক্তির হুমকির অভিযোগে থানায় জিডি করলেও কাউকে অবহিত না করা এবং সহযোগিতা নেওয়ার আগ্রহ না দেখানো। ১০. রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট দেওয়া নিয়ে টিমের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হয়েও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া।

১১. কক্সবাজার জেলার জমি অধিগ্রহণের মামলা তদন্তের প্রতিবেদনে দুদকের নির্দেশনা অনুসরণ না করা। ১২. স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মের অনুসন্ধান প্রতিবেদন নিয়ে তদারককারী কর্মকর্তাই দ্বিমত করা এবং প্রতিবেদন বিবেচিত না হওয়ায় কর্তৃপক্ষের ফের টিম গঠন করে অনুসন্ধানে পাঠানো।

১৩. কর্ণফুলী গ্যাসের অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর চাপ দিয়ে ছোট ভাইকে বিজ্ঞাপন ছাড়াই চাকরি দেওয়া এবং আত্মীয়কে জাল সনদে চাকরি দেওয়া। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানান দুদক সচিব।

এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সই করা এক অফিস আদেশে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যা থেকেই আদেশ কার্যকরের কথা বলা হয় তাতে। ২০০৮ সালের দুদক চাকরি বিধির ৫৪ (২)-এর ক্ষমতাবলে এই আদেশ দেওয়ার কথা জানানো হয়।

ওই আদেশের প্রতিবাদে পরদিন দুদকের প্রধান কার্যালয়সহ ২১ জেলায় মানববন্ধন করেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তার আগে দুদক সচিবের বরাবর একটি স্মারকলিপিও পেশ করেন তারা। এর ফলে বিষয়টি গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে, নিজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যে সত্য নয়, সেটা প্রমাণ করার সুযোগ চেয়েছেন দুদকের তরুণ কর্মকর্তা শরীফ। অভিযোগের বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এক ভিডিও বার্তায় শরীফ উদ্দিন সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন। সেইসঙ্গে রাষ্ট্র ও কমিশনের কাছে সুযোগ চেয়েছেন, যাতে তিনি সত্য প্রমাণ করতে পারেন।

প্রসঙ্গত, বৃহত্তর চট্টগ্রামে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন শরীফ উদ্দিন। কিন্তু তারপরও দুদক পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে গত বছর ১৬ জুন শরীফ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়।