হিজাবী ছাত্রীদের আটকাতে কর্ণাটকে নতুন ফাঁদ

ভারতে হিজাব নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যেই হিজাব পরা ছাত্রীদের বিরুদ্ধে নতুন কৌশল নিচ্ছে কর্ণাটক সরকার। তারা বলছে, হিজাব নিয়ে ক্লাস এবং পরীক্ষায় অংশ নেয়া যাবে না। এবারের পরীক্ষায় অংশ না নিলে পরবর্তী সময়ে আর কখনো পরীক্ষায় অংশ নেয়া যাবে না। গতকাল সোমবার হিজাব পরিহিতা ছাত্রীদের জন্য এমন নির্দেশনার ফাঁদ পেতেছে রাজ্য সরকার। খবর হিন্দুস্তানটাইমস।

কলেজের গেটের বাইরে হিজাব পরা ছাত্রীদের ভিড়

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্ণাটক সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, যদি কেউ এখন পরীক্ষায় না বসে, তাহলে পরে তাকে আর পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না। ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান হিজাব বিতর্কের কারণে কলেজগুলো বন্ধ থাকায় তা স্থগিত করা হয়েছিল। আমরা কলেজগুলোকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছি, যারা পরীক্ষায় অংশ নেবে না তাদের আর পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে না।

এর অর্থ, তারা ১০০ নম্বরের মধ্যে ৩০ নম্বর হারাবে। মূল পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ এপ্রিল থেকে ৬ মে। ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্নাটকে প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। 

কলেজে ঢুকতে না পেরে বাইরেই অবস্থান করছে মুসলিম ছাত্রীরা

এ অবস্থায় গতকাল সোমবার উদুপি জেলার কুন্দাপুরায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তালুকের সরকারি জুনিয়র কলেজে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছেন। তবে অনেক স্থানেই মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় তারা দ্বিতীয় প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহারিক পরীক্ষা বয়কট করেছে। উদুপির মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল কলেজের হিজাব পরিহিত শিক্ষার্থীরা তাদের প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা না দিয়েই চলে গেছে।

অনেক কলেজ হিজাব নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। কোথাও কোথাও হিজাব পরা ছাত্রীদের প্রবেশে বাধা দিতে গেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উদুপি প্রি-ইউনিভার্সিটি গার্লস কলেজের আটজন শিক্ষার্থী, যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাবের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কর্ণাটক হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন, তারাও পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন।

জি শঙ্কর সরকারি কলেজে ছাত্রীরা ক্লাসে প্রবেশের অনুমতি চাইলেও কর্ণাটক হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী আদেশের বরাত দিয়ে শিক্ষকরা তাদের ক্লাসে প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানান। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন, বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। হিজাব পরে ঢুকতে না দেয়ায় অনেক মুসলিম ছাত্রী বাড়ি ফিরে যান।

এদিকে, রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া গতকাল সোমবার বলেন, স্কুল ইউনিফর্ম নির্ধারণ করা উচিত জুন বা জুলাইয়ের শুরুতে। কিন্তু বিজেপি ষড়যন্ত্র করে মুসলিম মেয়েদের শিক্ষা পেতে বাধা দেওয়ার জন্য জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এসে ইচ্ছামত ড্রেস কোড নির্ধারণ করছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে হিজাব পরিহিত কিছু মুসলিম মেয়েকে কর্ণাটকের উদুপির একটি সরকারি কলেজে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে একাধিক কলেজে সেরকম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। গত কয়েকদিনে সেই পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে।

এরই মধ্য বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। মামলাটি এখন বিচারাধীন। এই আবহে কর্ণাটক হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী আদেশ এবং রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হিজাব ও গেরুয়া শাল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।