আপনি পড়ছেন

চীনে ২০১৯ সাল থেকে স্কুলগুলোতে সরকারের ‘স্মার্ট ক্যাম্পাস’ প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে ‘ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম’ বা মুখচ্ছবি শনাক্তকরণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সেসব স্ক্যানারের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। তারা বলছেন, এটি তাদের সন্তানদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করছে।

chinese school faces recognition scannersচীনা স্কুলে ফেসিয়াল স্ক্যানার নিয়ে নানা ‘সন্দেহ-সংশয়’

বৃহস্পতিবার ট্যান (ছদ্মনাম) নামের এক অভিভাবক হুবেই প্রদেশের প্রত্যন্ত বাডং জেলার ওয়েবসাইটে একটি অভিযোগ পোস্ট করেছেন। এতে স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে অভিযুক্ত করে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসে কেনাকাটা করতে শিক্ষার্থীদের মুখচ্ছবি শনাক্তকরণ স্ক্যানার ব্যবহার করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

অভিযোগ অনুসারে জিংজিন ইউয়ি মিডল স্কুলটিতে ডিসেম্বর থেকে চীনা আর্থিক প্রযুক্তি জায়ান্ট আলিপে পরিচালিত স্ক্যানার সিস্টেমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অর্থ প্রদান করছে। স্ক্যানারগুলো প্রথম ইনস্টল করার সময়ও অভিভাবক ট্যান সরকারি ওয়েবসাইটে একটি অভিযোগ পোস্ট করেছিলেন। যুক্তি দিয়েছিলেন, ওই সিস্টেমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মুখের ডেটা ফাঁস হয়ে গোপনীয়তার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

মিডল স্কুল কর্তৃপক্ষ এক প্রতিক্রিয়ায় জানায়, আলিপে সিস্টেম বেশ কয়েকটি সমস্যার সমাধান করে থাকে। যেমন- শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস কার্ড হারায় এবং ইন্টারনেট ক্যাফের মতো ‘অযৌক্তিক’ জিনিসগুলোতে অর্থ ব্যয় করা রোধ করে। বলা হয়, এই সিস্টেম ব্যবহারে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ছাত্র এবং শিক্ষকরা সবাই বিশ্বাস করে যে, এটি একটি ভাল ধারণা।

তবে ট্যান অভিযোগ করেন, সিস্টেমটি বাধ্যতামূলক। অন্য একটি পোস্টে তিনি দাবি করেন, স্কুলের শিক্ষকরা তাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন।

আলিপে’র মতে, ‘ওয়ান ফেস পাস’ নামে ওই ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেমটি প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। প্রযুক্তিটি শিক্ষার্থীদের যাচাইকরণ এবং অর্থ পরিশোধে ব্যবহার করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের তাদের মুখের ডেটা এবং তাদের পিতা-মাতার ব্যাংকের তথ্য সরবরাহ করতে হবে।

চীনের কতগুলো স্কুলে ‘ওয়ান ফেস পাস’ সিস্টেম ইনস্টল করেছে তা স্পষ্ট নয়। বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি আলিপে।

স্কুলটি বলছে, ‘ওয়ান ফেস পাস’ সিস্টেম চীনের ‘স্মার্ট ক্যাম্পাস’ উদ্যোগের অংশ। ২০১৯ সালে এটি চালু করা হয়। এই সিস্টেমটি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে। শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করা থেকে লাইব্রেরির বই ধার নেওয়া পর্যন্ত এটি ব্যবহার করা হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুখচ্ছবি শনাক্ত চীনে একটি লাভজনক শিল্পে পরিণত হয়েছে। স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের নিরীক্ষণের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে। পুলিশ সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করতে এটি ব্যবহার করে এবং গেমিং কোম্পানিগুলো অপ্রাপ্তবয়স্কদের গভীর রাতে খেলা থেকে বিরত রাখতে এটি ব্যবহার করে।

এক ইন্ডাস্ট্রির হিসাবে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে চীনে ফেস স্ক্যানার স্থাপনের সংখ্যা গড়ে প্রতি বছর ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

চীনের জনগণও দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক বলে মনে হচ্ছে। ২০২০ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে ৬০ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা বলেছেন, ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেমগুলো অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ৩০ শতাংশের বেশি মুখের ডেটা ফাঁস বা অপব্যবহার করা হয়েছে।

প্রযুক্তির মাধ্যমে হওয়া সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে সরকার এখনও একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করছে। গত জুলাইয়ে চীনের সুপ্রিম কোর্ট প্রথমবারের মতো একটি নথি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, যেকোনো পরিস্থিতিতে মুখচ্ছবি ব্যবহার গোপনীয়তার লঙ্ঘন বলে গণ্য করা যেতে পারে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দর্শন নিয়ে কাজ করা চীনা একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের গবেষণা পরিচালক ডুয়ান ওয়েইয়েন সিক্সথ টোনকে বলেছেন, স্কুলগুলোকে শিশুদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

চীনের নতুন গৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের অধীনে, একজন ব্যক্তির মুখের ডেটা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের সম্পর্কিত যেকোনো ডেটা ‘সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এর অর্থ হলো- এসব তথ্য কেবল কঠোর মূল্যায়নের পরে সংগ্রহ করা যেতে পারে। এগুলো ব্যবহারে প্রতিষ্ঠানটিকে এসব তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনীয়তা নায্য হতে হবে।

ডুয়ান বলেন, “মুখচ্ছবির অপব্যবহারে ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য নৈতিক ঝুঁকি এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে পুরোপুরি সচেতন হওয়া উচিত।”

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.