ইউক্রেন কি পুতিনের জন্য আরেক আফগানিস্তান!
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাডেলিন আলব্রাইটসহ বেশ কয়েকজন ভাষ্যকার দৃঢ়তার সাথে যুক্তি দিয়েছিলেন, ইউক্রেনের আরও বেশি অংশে রাশিয়া তার দখলদারিত্ব নেবে। এমনটি করতে গিয়ে রাশিয়া একটি শক্ত বিদ্রোহের মুখে পড়তে পারে। ১৯৮০ এর দশকে যেমন আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়ন পড়েছিল। তার পরেই ভেঙ্গে খান খান হল সোভিয়েত সাম্রাজ্য। ওয়াশিংটনভিত্তিক ফরেন পলিসির সিনিয়র ফেলো ব্রুচ রিডেল এক নিবন্ধে এসব কথা বলেন।
ভ্লাদিমির পুতিন
বলা হচ্ছে, আফগানিস্তানে পরাজয়ে যেটি ঘটেছিল, তা হল ওয়ারশ চুক্তি ও সোভিয়েত ইউনিয়নে ভাঙন। সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ভেঙে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ ছিল আফগানিস্তানে পরাজয়। যাকে খোদ পুতিন ‘শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভূ-রাজনৈতিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছেন। ইউক্রেনে তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে কি-না, তা বোঝার জন্য ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েতরা কীভাবে মুজাহিদিনদের কাছে পরাজিত হয়েছিল তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৭৯ সালের ক্রিসমাসের প্রাক্কালে আফগানিস্তান দখলকারী রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যত সমস্ত যুদ্ধই আফগানরা প্রতিরোধ করেছিল। সেই প্রতিরোধ ছিল ব্যাপক এবং স্বতঃস্ফূর্ত। তবে আফগানরা সেখানে একা ছিল না।
প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার দ্রুত রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একটি কৌশলগত জোট গঠন করেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি পাকিস্তানের নেতা জিয়াউল হককে পাকিস্তানে আশ্রয়, ঘাঁটি এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে মুজাহিদিনদের সমর্থন করতে রাজি করিয়েছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরব যৌথভাবে বিদ্রোহে অর্থায়ন করেছিল। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা, আইএসআই (ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স) মুজাহিদিনদের পৃষ্ঠপোষক ছিল। সিআইএ এবং সৌদি গোয়েন্দা সংস্থা যুদ্ধের অর্থদাতা এবং কোয়ার্টার মাস্টার ছিল।
শীতল যুদ্ধের আফগানিস্তানে কোনো সিআইএ অফিসারকে মোতায়েন করা হয়নি। ব্রিটিশ সরকার এম১৬ আফগানিস্তানে অফিসারদের জন্য পাঠিয়েছিল, যা ছিল বাছাই করা অস্ত্র। বাকি সব করেছে আইএসআই। সেটা ছিল জিয়াউল হকের যুদ্ধ। আইএসআই প্রশিক্ষণ এবং মাঝে মাঝে যুদ্ধে মুজাহিদিনদের নেতৃত্ব দিয়েছিল। এমনকি তারা সোভিয়েত মধ্য এশিয়ায় আঘাত করেছিল।
মুজাহিদিনদের পেছনের ফ্রন্টলাইন স্টেট হওয়া পাকিস্তানের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকি ও বিপদ ডেকে আনে। রাশিয়ানরা পাকিস্তানি ভিন্নমতাবলম্বীদের সমর্থন করেছিল যারা পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান ছিনতাই এবং জিয়াকে হত্যার প্রচেষ্টাসহ দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলার আয়োজন করে। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৯৮৮ সালে একটি সন্দেহভাজন বিমান দুর্ঘটনায় জিয়াউল হক নিহত হন।
পাকিস্তানি যোদ্ধারা ডগফাইটে সোভিয়েত বিমানের সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি উপজাতীয় সীমান্ত এলাকাগুলো হয়ে ওঠে বিপজ্জনক ও অশান্ত। একটি কালাশনিকভ সংস্কৃতির উদ্ভব হয়, যা আজও পাকিস্তানকে তাড়া করে।
ওয়াশিংটন এবং রিয়াদের জন্য আফগানিস্তানের অপারেশনটি মোটামুটি সস্তা ছিল। তৎকালীন সৌদি গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সাল লিখেছেন, সৌদিরা আফগানদের সহায়তায় ২.৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। সিআইএ প্রায় একই অর্থ খরচ করেছে।
রিয়াদ প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর বর্তমানে বাদশাহ সালমানের নেতৃত্বে সৌদি ব্যক্তিগত সূত্র আফগান মুজাহিদিনদের জন্য আরও ৪ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে। ওসামা বিন লাদেনসহ সৌদি নাগরিকরা মুজাহিদিনে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু খুব কমই প্রকৃত যুদ্ধে নিযুক্ত ছিলেন।
আফগান জনগণ যুদ্ধের জন্য একটি ভয়ঙ্কর মূল্য দিয়েছে। অন্তত এক মিলিয়ন আফগান মারা গেছে, ৫০ লাখ পাকিস্তান ও ইরানে উদ্বাস্তু হয়েছে এবং আরও লাখ লাখ মানুষ নিজ দেশে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। কিন্তু তারা জিতেছে।
সোভিয়েতরা বিদ্রোহীদের পরাজিত করার জন্য পর্যাপ্ত সৈন্য পাঠায়নি এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য পর্যাপ্ত আফগানদের নিয়োগও করতে পারেনি। পাকিস্তানিরা রাশিয়ানদের ভয় পায়নি। আফগান জনগণ তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিল।
আফগান উপমা ইউক্রেনের নতুন যুদ্ধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। কোন রাজ্য বা রাজ্যগুলেো ফ্রন্টলাইন স্পন্সর হবে? তারা কি যুদ্ধের ধাক্কা নিতে প্রস্তুত? যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো কতটা সহায়তা দেবে? বিদ্রোহ একটি বৃহত্তর সংঘাতের জন্ম দেবে কিনা কিংবা ইউক্রেনীয়রা কি মূল্য দিতে প্রস্তুত? এসব নানা হিসাব-নিকাশ সামনে রয়েছে।
পোল্যান্ড এবং রোমানিয়া ইউক্রেনের নিকটতম দেশ। উভয়ই ন্যাটো সদস্য এবং তাদের ভূখণ্ডে মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। ন্যাটো চুক্তির অনুচ্ছেদ পাঁচে তাদের প্রতিরক্ষায় আসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাকিস্তানের এমন কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না। বিদ্রুপের বিষয় হল, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই সপ্তাহে মস্কোতে দীর্ঘ পরিকল্পিত সফরে রয়েছেন।
বলা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর উচিত ইউক্রেনের প্রতিরোধকে সাহায্য করা। তবে আমাদের সম্ভাব্য পরিণতি, ঝুঁকি এবং সামনের ব্যয়গুলো বোঝা উচিত। ইউক্রেন আক্রমণ করা পুতিনের সিদ্ধান্ত রাশিয়ার জন্য আরেকটি ভূ-রাজনৈতিক বিপর্যয় হতে পারে। তবে সেটা তখনই ঘটবে যদি ইউক্রেনের মিত্ররা রাশিয়ার প্রতিরোধে যুক্ত হয়।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.