পরমাণু বোমার বোতামটা কি সত্যিই টিপে দেবেন পুতিন!

দিন দিন ঘোলাটে হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতি। আগেই বলা হচ্ছিল, ইউক্রেনে হামলা হলে তা পৃথিবীকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। প্রতিবেশী দেশটিতে হামলার তিনদিনের মাথায় রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তিকে বিশেষ সতর্কাবস্থায় রাখার জন্য রুশ সামরিক বাহিনীকে যে আদেশ দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন, তাতে সেই শঙ্কাই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

পুতিন ও পরমাণু যুদ্ধ

এ পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে প্রশ্ন, পুতিন কি পরমাণু বোমার বোতামটা সত্যিই টিপে দেবেন? যদি সেটাই হয়, তাহলে বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে আর কোনো আইন-রীতি-রেওয়াজের ধার ধারতে হবে না কাউকেই।

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং নোভোয়া গেজেটা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক দিমিত্রি মুরাতভ মনে করেন, পুতিন এ পর্যন্ত যা কিছু বলেছেন, তা আসলে পারমাণবিক যুদ্ধের সরাসরি হুমকি। ইউক্রেন প্রশ্নে ন্যাটো নেতৃবৃন্দের আগ্রাসী বক্তব্যে অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি ইতোমধ্যেই তার দেশের পারমাণবিক শক্তিকে ‘বিশেষ সতর্কাবস্থায়’ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী দিমিত্রি মুরাতভ

পুতিন অনেকবারই বলেছেন, যদি রাশিয়াই না থাকে, তাহলে এই গ্রহের দরকার কী? তার সেসব কথা আমলে নেয়নি কেউই। কিন্তু এর অন্তর্নিহিত অর্থ খুবই গভীর। অর্থাৎ, যদি তার চাওয়ার ভিন্ন কোনো আচরণ করা হয়, তাহলে তিনি রাশিয়ার সাথে সবকিছু নিশ্চিহ্ন করে দেবেন।

২০১৮ সালে এক তথ্যচিত্রে প্রেসিডেন্ট পুতিন মন্তব্য করেছিলেন, কেউ যদি রাশিয়াকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়, তার জবাব দেবার আইনি অধিকার আমাদের রয়েছে। হ্যাঁ, পৃথিবী ও মানবজাতির জন্য সেটা হবে একটা মহা-বিপর্যয়। কিন্তু আমি রাশিয়ার একজন নাগরিক ও রাষ্ট্রপ্রধান। রাশিয়া ছাড়া কোনো পৃথিবীর কি আমাদের আদৌ প্রয়োজন আছে?

পরিস্থিতি এখন সেরকমই জটিলতার দিকে যাচ্ছে। কারণ পুতিন তার কথামতো পুরোদমে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছেন। অন্যদিকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী তা কঠোরভাবে প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। আবার ক্রেমলিনকে অবাক করে দিয়ে রাশিয়ার অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে ফেলার মতো অবরোধ আরোপে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব।

এ অবস্থায় পুতিন খুবই কঠিন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন বলে মনে করেন মস্কোভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ পাভেল ফেলজেনহাওয়ার। তিনি বলেন, পুতিনের সামনে আসলে তেমন কোনো পথ খোলা নেই। পশ্চিমা বিশ্ব যদি রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করে ফেলে, তাহলে রাশিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পতন হবে। সেক্ষেত্রে রাশিয়ার জন্য একটি উপায় হতে পারে ইউরোপের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া। অন্য একটি বিকল্প হতে পারে, কোনো এক স্থানে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা।

নোবেল বিজয়ী মুরাতভকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যদি পুতিন পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েই নেন, তাহলে কেউ কি তাকে বাধা দিতে পারবে? জবাবে মুরাতভ বলেন, এ ধারণাটা ভুল। কারণ রাশিয়ার রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠী কখনোই জনগণের পক্ষ নেয় না। তারা সবসময় শাসকদের পক্ষে। সেখানে ক্রেমলিনই শেষ কথা। তাই পুতিনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সেখানে কেউই প্রস্তুত নন।

ইউক্রেন নিয়ে এখনো আশাবাদী পুতিন। মোটাদাগে, এর আগে কোনো যুদ্ধে হারেননি তিনি। এবার তাই জয়ের প্রত্যাশা করছেন। এর মধ্যে যদি কোনোভাবে তার উপলব্ধি হয় যে, তিনি ব্যর্থ হচ্ছেন, তাহলে যে কোনো মরিয়া পদক্ষেপ নিতে পারেন তিনি। সেক্ষেত্রে বিশ্ব সাক্ষী হতে পারে পরমাণু যুদ্ধের।