ইউক্রেন ইস্যু: পশ্চিমাদের উপেক্ষা, রুশ-চীন বলয়ে আমিরাত!

মধ্যপ্রাচ্যের দরিদ্র দেশ ইয়েমেনের সরকার হটিয়ে ২০১৫ সালে ক্ষমতা দখল করে ইরানপন্থী আনসারুল্লাহ তথা হুথি বিদ্রোহীরা। তাদের দমন করে নিজেদের মদদপুষ্ট সরকার ফের ক্ষমতায় বসাতে দেশটিতে সর্বাত্মক আগ্রাসন চালায় প্রতিবেশী সৌদি আরব-সংযুক্ত আরব আমিরাত জোট। সেই সংঘাত এখনো চলছে, এর মধ্যে পূর্ব ইউরোপে শুরু হয়েছে আরেক আগ্রাসন।

শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ও ভ্লাদিমির পুতিন, ফাইল ছবি

পশ্চিমাদের প্রভাব কমাতে এবং নিজেদের অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠায় ইউক্রেনে ভয়াবহ আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তিন দিক দিয়ে দেশটিতে সর্বাত্মক রুশ আক্রমণ শুরু হলে মস্কোকে একঘরে করার প্রক্রিয়াও শুরু করে পশ্চিমা দেশগুলো। রাশিয়াকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন আর অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।

কিয়েভে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হামলার নির্দেশ এবং তার বাহিনীর আক্রমণে নিন্দার ঝড় বইছে সারা বিশ্বে। এর মধ্যেও হাতেগোণা কয়েকটি দেশ মস্কোকে প্রকাশ্যে সমর্থন না করলেও নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে। এই তালিকায় মার্কিন বলয়ের অন্যতম দেশ আমিরাতও রয়েছে।

ইয়েমেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মানচিত্র

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনকে তিরস্কার করে অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি উঠেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে। সংস্থাটির জরুরি অধিবেশন ডেকে বুধবার একটি প্রস্তাবনা তোলা হয়, যাতে সমর্থন দেয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এই প্রস্তাব পাসের রাজনৈতিক দিক থাকলেও তা মানা বাধ্যতামূলক নয়।

তার আগে শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তোলা একই ধরনের প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়, যাতে ভোটদান থেকে বিরত ছিল অনেক দেশ। এর ফলে প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বিপরীতধর্মী হয়ে যায়। এই প্রস্তাবটি অধিক ফলপ্রসূ থাকলেও তাতে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে রাশিয়ার।

আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে ফোন করেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। ওয়াশিটেনের আহ্বান উপেক্ষা করে ভোটদান থেকে বিরত থাকে আরব দেশটি। আমিরাতের এই সিদ্ধান্ত প্রকারন্তরে রাশিয়ার পক্ষেই গেছে বলা যায়।

এর মধ্যেই ইউক্রেন উস্যুতে আমিরাতের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাস। গত রোববার এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, কোনো পক্ষ নিলে সহিংসতা আরো বাড়বে বলে মনে করে তার দেশ। সেজন্য সব পক্ষকে এই সংকটের কূটনৈতিক সমাধানে উৎসাহিত করছে তারা।

বুধবার জাতিসংঘে নিযুক্ত আমিরাতের দূত লানা নুসেইবেহ বলেন, যে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে, তা প্রয়োজনীয় এক সিগন্যাল বলে এখন আমরা মেনে নিচ্ছি। এটা আমাদের মেনে চলা উচিত। পশ্চিমাদের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র আমিরাত ওয়াশিংটনের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নীতির সমর্থক। দেশটির এ মাসে নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্সি হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কিংস কলেজ লন্ডনের স্কুল অব সিকিউরিটি স্টাডিজের সহযোগী প্রফেসর অ্যান্দ্রেস ক্রিগ বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতি নিয়েছে আমিরাত। সংঘাতের সময়ে মস্কোকে সমর্থন করতে উদগ্রীব আবুধাবি, সে জন্য নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়া।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপীয় সংকটে আমিরাতের অবস্থানের পরিবর্তন বুঝা যাচ্ছে, যার পেছনে রয়েছে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক। এ ছাড়া নমনীয় পররাষ্ট্র নীতি হিসেবে পশ্চিমা অংশীদারদের পাশাপাশি চীন, রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ক বিস্তৃত হছে আবুধাবির।