‘বেওয়ারিশ লাশ’ হয়ে কবরে হাজারও মানুষ!
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
সম্প্রতি ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাতনামা এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তার আনুমানিক বয়স ৬৫ বছর। ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়। তাৎক্ষনিকভাবে তার নাম পরিচয় জানার চেষ্টা করে রেলওয়ে পুলিশ। খবর পাঠানো হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, পিবিআইকে।
‘বেওয়ারিশ লাশ’ হয়ে কবরে যাচ্ছে হাজারও মানুষ
অজ্ঞাত ওই বৃদ্ধের লাশ শনাক্তের জন্য পিবিআই ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন এ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (এফআইভিইএস) ব্যবহার করে। কিন্তু তাতেও পরিচয় মেলেনি ওই বৃদ্ধের।
কারণ বয়সের কারনে হাতের চামড়া ও আঙ্গুুলের ছাপ অনেকটা ক্ষয় হয়ে গেছে সেই বৃদ্ধের। যার দরুণ তার আঙ্গলের ছাপ নির্বাচন কমিশনে রক্ষিত তথ্যের সাথে মেলেনি।
অনেক চেষ্টা করেও পরিচয় না মিললে সেই বৃদ্ধের লাশ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। অজ্ঞাত হিসেবে লাশের দাফন সম্পন্ন করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম।
অপরদিকে গত বছরের জুলাই মাসে সাভার হাইওয়ে রোডের পাশে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রায় অর্ধগলিত লাশের পরিচয় শনাক্তে খবর পাঠানো হয় পিবিআইকে। কিন্তু সেই তরুণীরও আঙ্গুুলের ছাপ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। নিহত ওই তরুণীর বয়স আনুমানিক ১৫-১৬ বছর। স্বাভাবিকভাবেই তার ভোটার আইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ছিল না। তাই নির্বাচন কমিশনে রক্ষিত আঙ্গুরের ছাপ থেকেও কোন তথ্য পাওয়া সম্ভব ছিল না। ময়নাতদন্তের পর ওই তরুণীর লাশও বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।
এভাবেই সারাদেশে প্রতিবছর প্রায় হাজার খানেক মানুষ অজ্ঞাতনামা বা বেওয়ারিশ লাশ হয়ে কবরে চলে যাচ্ছে। তাদের পরিবার, আত্বীয় স্বজনেরা কেউ জানতেও পারছে না যে তাদের প্রিয় মানুষটি পৃথিবীতে আর নেই।
সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানের সূত্র বলছে, সারাদেশে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতনামা লাশের প্রায় ৭৮ শতাংশেরই পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
যদিও অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় শনাক্তের জন্য কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, পিবিআই। অজ্ঞাতনামা কোনো লাশ উদ্ধার হলে পিবিআই প্রথমেই ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন এ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম, এফআইভিইএস ব্যবহার করে ফিঙ্গার প্রিন্ট বা আঙ্গুুলের ছাপ সংগ্রহ করে। এরপর তা পাঠানো হয় পিবিআইয়ের ক্রাইম এ্যান্ড ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে। ল্যাব থেকে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে রক্ষিত তথ্যভান্ডার থেকে পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডারে যাদের তথ্য আছে অর্থাৎ জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে আঙ্গুুলের ছাপের মাধ্যমে শুধুমাত্র তাদের পরিচয়ই মেলে। যাদের পরিচয়পত্র নেই বা এখনো করা হয়নি তাদের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয় না।
আরো কিছু কারণে আঙ্গুুলের ছাপ ব্যবহার করে অজ্ঞাত লাশের পরিচয় বের করা সম্ভব হয না। অনেক হাতের ব্যবহার হয় এমন শক্ত কাজের সাথে যুক্ত- কেউ ইটভাঁটায় কাজ করে, কেউ রিকশা চালায়, কেউ ইট পাথর ভাঙার সাথে জড়িত। আবার অনেকে হোটেল বা রেস্টুরেন্টে অথবা বাসা বাড়িতে অতিরিক্ত পানির কাজ করে। এসব কারণে অনেকের হাতের আঙ্গুলের ছাপ ক্ষয় হয়ে যায়।
অনেক লাশে পচন ধরলে তাদের তাদের আঙ্গুলও পচে যায়। তখন ছাপ নেওয়া সম্ভব হয় না। আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির হাত পুড়ে গেলে আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া সম্ভব হয় না। স্বাভাবিকভাবেই পরিচয় বের করাও সম্ভব হয় না।
অজ্ঞাতনামা লাশ শনাক্তের সাথে যুক্ত পিবিআইয়ের সাইবার ক্রাইম এ্যান্ড ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব, সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও বেওয়ারিশ লাশ দাফনকারী প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়, অজ্ঞাতনামা লাশ শনাক্তের জন্য সারাদেশে ৪৭টি ইউনিট কাজ করে। পিবিআইয়ের সকল ইউনিটে লাশ শনাক্তের জন্য মোট ৬৬টি ডিভাইস রয়েছে।
২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে দুই হাজার ৪৩৩টি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় বের করতে কাজ করে পিবিআই। তার মধ্যে সংস্থাটি ৫৩৬টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। আর বাকি লাশগুলো অজ্ঞাতনামা হিসেবেই দাফন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। সে হিসেবে তিন বছরে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতনামা লাশের ৭৭ দশমিক ৯৬ ভাগের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
আর পরিচয় শনাক্ত হওয়া এসব লাশের মধ্যে পুরুষ ৩৯৭ এবং নারী ১৩৯ জন। অজ্ঞাতনামা উদ্ধার করা লাশগুলোর মধ্যে ১১০ জন ছিলেন বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের শিকার। এছাড়া অন্য লাশগুলো বেশির ভাগই সড়ক ও রেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়। আবার কিছু কিছু লাশ ছিল ভবঘুরে মানুষের, যাদের হয়তোবা স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
এই বিষয়ে পিবিআইয়ের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, অজ্ঞাতনামা লাশ শনাক্তের জন্য আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে। কোথাও খবর পেলেই বা পরিচয় শনাক্তের জন্য কোন থানা পুলিশ খবর পাঠালেই আমরা গিয়ে লাশটি শনাক্তের চেষ্টা করি। লাশের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে তা এনআইডি সার্ভারের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। যাদের পরিচয়পত্র থাকে না তাদের লাশ আমাদের এই সিস্টেমে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
এই বিষয়ে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাসেল মাহমুদ জানান, প্রতিবছর প্রায় হাজরের ওপর বেওয়ারিশ লাশ দাফন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ বা মর্গ থেকে আমাদের কাছে বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জন্য খবর দেওয়া হয়। তখন আমাদের নিজস্ব টিম লাশ নিয়ে আসে। এরপর ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী সকল কাজ সম্পন্ন করে লাশ দাফন করা হয়।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংস্থাটির শুধু মুগদা শাখাতেই ১৭টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.