বাপ-দাদাদের কৌশলে যুদ্ধ করে এখনও টিকে আছে ইউক্রেন!

রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধে সোভিয়েত জেনারেলদের প্রণীত রণকৌশল অনুসরণ করছে ইউক্রেন। সম্ভাব্য আক্রমণের মুখে শহরগুলোকে দূর্গে রূপান্তর করে শত্রুপক্ষের শক্তিক্ষয়ের পরিকল্পনা করেছিল সোভিয়েত জেনারেল স্টাফ (এসজিএস)। ইউক্রেন এখন সে কৌশলটিই কাজে লাগাচ্ছে।

ইউক্রেনীয় সেনারা তাদের অবস্থানে একটি পরিখার মধ্যে অপেক্ষা করছেন

পূর্ব জার্মানিতে সোভিয়েত সেনাবাহিনী পরাজিত হলে, অথবা, ন্যাটো বাহিনীগুলো কখনও সোভিয়েত ভূখণ্ডে ঢুকে পড়লে কিভাবে তাদের ঠেকাতে হবে সে বিষয়ে বিষদ পরিকল্পনা ছিল সোভিয়েত জেনারেলদের। তাদের পরিকল্পনার কেন্দ্রে ছিল ‘ফোর্টরেস সিটিজ সিস্টেম’। নগরগুলোকে দূর্গে পরিণত করে সেইসব দূর্গের শিকল বা ‘চেইন অব সিটিজ’ আক্রমণকারী বাহিনীকে প্রতিরোধ করবে, এটাই ছিল সোভিয়েত প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার মূলকথা।

সোভিয়েত জেনারেলরা ভেবেছিলেন, ন্যাটো বাহিনী স্থলভাগে আক্রমণ চালালে প্রথম সারির শহরগুলোতেই শক্ত বাধার সামনে পড়বে এবং সেখানকার প্রতিরোধ কাটিয়ে সামনে এগোতে চাইলে তাদের ব্যাপক শক্তিক্ষয় হবে। সামনের সারির শহরগুলো ন্যাটো বাহিনীকে যত ব্যস্ত রাখবে, পেছনের শহরগুলোতে সৈন্য সমাবেশ ও প্রতিরোধ-ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে তত বেশি সময় পাবে সোভিয়েত বাহিনী।

নিজেদের প্রতিরক্ষা কৌশল প্রণয়নে এসজিএসকে অনুসরণ করেছে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী। ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নেরই অংশ ছিল ইউক্রেন। সেই হিসেবে পূর্বসূরীদের কৌশল কাজে লাগিয়ে অনেকটা ‘সফল’ ইউক্রেনিয়ান বাহিনী। যুদ্ধোত্তর কালে খুব দ্রুত নগরায়ন হয়েছে ইউক্রেনে। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ শহরাঞ্চলে বাস করে।

বহিঃশত্রুর যে কোনো সম্ভাব্য আক্রমণে শহর থাকে টার্গেট তালিকায় উপরের দিকে থাকে শহরগুলো। আবার শহরাঞ্চলে যুদ্ধ হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন ও রক্তক্ষয়ী। সমরকৌশলবিদদের ভাষায়, শহরাঞ্চল হলো যে কোনো যুদ্ধে সবচেয়ে কঠিন ও রূঢ় ‘অপারেটিং এনভায়রনমেন্ট’। একটি শহর আক্রমণকারী বাহিনীকে সফলতার নূন্যতম স্বাদ না দিয়েই পুরো এক বা একাধিক ডিভিশন সৈন্যকে ব্যস্ত রাখতে এমনকি হজম করে ফেলতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্ট্যালিনগ্রাদে নাৎসি বাহিনী, অথবা, নব্বই দশকে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনিতে রুশ বাহিনীর নাজেহাল অবস্থার কথা ভাবলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

এবার রুশদের বিরুদ্ধে একই কৌশল নিয়েছে ইউক্রেন। এজন্যই রুশ বাহিনী ইউক্রেনের শহরগুলোকে ডিঙিয়ে সামনে এগোতে পারছে না। আবার, পূর্ণশক্তি নিয়ে শহরাঞ্চলে আক্রমণ করতেও পারছে না তারা। এমন আক্রমণ করতে গেলেই গ্রোজনি বা স্ট্যালিনগ্রাদের পুনরাবৃত্তি হবে, যা রুশরা কখনোই চাইবে না। ইউক্রেনের শহরগুলোর আশেপাশে থেকে মাঝে মাঝে সেনা স্থাপনায় গোলাবর্ষণ এবং সরবরাহ লাইন বন্ধ রেখে শহরবাসী ও ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের মনোবল হ্রাসের চেষ্টাই এখন রাশিয়ার একমাত্র কৌশল।