দুর্দান্ত সাফল্যে তুর্কি প্রতিরক্ষা শিল্প!

তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের ক্রমাগত সাফল্য এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। মনুষ্যবিহীন এরিয়াল ভেহিকল বা ইউএভি ‘বের‌্যাকটার টিবি২’ ড্রোন সিরিয়া থেকে দক্ষিণ ককেশাশের কারাবাখ পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্যের নজির স্থাপন করেছে। ল্যান্ডমার্ক এই ড্রোন ছাড়াও তুর্কি প্রতিরক্ষা শিল্পে আরও বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পণ্য রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে তুরস্কের মনুষ্যবিহীন এরিয়াল ভেহিকল বা ইউএভি ‘বের‌্যাকটার টিবি২’ ড্রোন

ডেইলি সাবাহর এক নিবন্ধে বলা হচ্ছে, তুরস্কের হাতে রয়েছে একেবারে নতুন কমব্যাট ড্রোন ‘আকিনচি’। এটি এখন পর্যন্ত দুটি দেশে বিক্রি হয়েছে, যার মধ্যে একটি হচ্ছে পাকিস্তান। পাকিস্তান ‘বের‌্যাকটার টিবি২’ ড্রোন কেনারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এমনকি পাকিস্তান তুরস্কের অভ্যন্তরীণভাবে তৈরি ফাইটার জেট টিএফ-এক্স নিজ তালিকায় যুক্ত করতে পারে।

এছাড়াও তুরস্কের রয়েছে ইউএভি ‘বের‌্যাকটার টিবি৩’ ড্রোন, যা তুরস্কের পতাকাবাহী উভচর অ্যাসল্ট জাহাজ ‘টিজিজি আনাদোলু’তে মোতায়েন করা হবে। গুজব রয়েছে, জাপানি নৌবাহিনীও ‘বের‌্যাকটার টিবি৩’ ড্রোন নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইউরোপীয় দেশগুলোসহ অন্যান্য দেশগুলো থেকে আগামী দিনে ড্রোনের নতুন ক্রয়াদেশ আশা করছে আঙ্কারা। ১৯টি দেশ বর্তমানে ‘বের‌্যাকটার টিবি৩’ ড্রোন ব্যবহার করছে।

অপরদিকে, ড্রোন ম্যাগনেট ‘বেকার’ এর ন্যাশনাল আনমানড কমব্যাট এরিয়াল ভেহিকেল সিস্টেম (এমআইইউএস) রয়েছে, যার নাম কিজিলএলমা (লাল আপেল)। এটি এখন ইন্টিগ্রেশন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। কিজিলএলমা ৯০০ কিলোমিটার (৫৬০ মাইল) গতিতে ছুটতে সক্ষম। ১.৫ টন লোড নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা বাতাসে ভেসে থাকবে। এটি বিমানবাহী বাহক থেকে উড্ডয়ন করতে পারবে। বেকার মহাকাশ শিল্পেও আগ্রহী বলে জানা গেছে।

ফিলিপাইন ছয়টি টি১২৯ ট্যাকটিক্যাল রিকনেসান্স অ্যান্ড অ্যাটাক হেলিকপ্টারের (এটিএকে) মধ্যে প্রথম দুটি পেয়েছে, যা তুর্কি অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টিএআই) এর সহায়ক সংস্থা টিউসাস ইঞ্জিন ইন্ডাস্ট্রিজ (টিইআই) উৎপাদন করেছে। নাইজেরিয়া তুরস্কের সাথে সম্পর্কিত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। জানা গেছে তুর্কি ড্রোনের দিকেই তাদের নজর।

অন্যদিকে, তুরস্কের ফিফথ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান টিএফ-এক্স জেট উৎপাদনে না যাওয়া পর্যন্ত তারা যুক্তরাষ্টের এফ-১৬ ব্যবহার করবে। রাশিয়ান জেট সম্ভবত নতুন ক্রয় প্রক্রিয়ার বিকল্প হবে না। তুরস্ক ইউরোফাইটারেও আগ্রহী এবং ৮০টি জেট কেনার পরিকল্পনা করছে।

প্রেসিডেন্সি অফ ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজের (এসএসবি) চেয়ারপারসন ইসমাইল ডেমির বলেছেন, একটি ১৫০০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিনও তৈরি করেছে তুরস্ক। এটি এখন পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক রোলস রয়েস এবং তুরস্ক-ভিত্তিক ক্যাল গ্রুপ যৌথভাবে টিএফ-এক্স জেটের ইঞ্জিনের উৎপাদনের কাজ প্রায় সম্পন্ন করতে যাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত তুরস্কের প্রতিরক্ষা প্রকল্পগুলোকে থামিয়ে দেওয়া এবং মন্থর করার পেছনে কারণ ছিল ইঞ্জিন। তুর্কি কোম্পানিগুলো ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও হেলিকপ্টারের জন্য ইঞ্জিন তৈরি করতে সক্ষম। কিন্তু ট্যাঙ্ক এবং ফাইটারের মতো বড় আকারের ইঞ্জিনের জন্য বিদেশি সহায়তা প্রয়োজন। তবে সাম্প্রতিক উন্নয়নগুলো ইঙ্গিত দেয়, এই সমস্যাটি প্রায় সমাধান করা হয়েছে। যা উন্নত অস্ত্রের ব্যাপক উত্পাদনের পথ তৈরি করতে পারে।

অনেক তুর্কি অস্ত্র যুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত এবং সস্তা। তাই আশা করা যেতে পারে, বিশ্বের আরও দেশ সেগুলো সংগ্রহ করবে। ফলে তুরস্কের প্রতিরক্ষা রপ্তানি বাড়বে। ২০২১ সালে তুর্কি কোম্পানিগুলেভ ৩.২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র রপ্তানি করেছে। এ বছর রপ্তানির পরিমাণ ৪ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। একইভাবে একদিকে অস্ত্র নির্ভরতা কমছে, পাশাপাশি তুর্কি প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলো উত্পাদন থেকে উচ্চ রাজস্ব আয় করছে।