রুশ আক্রমণের জেরে নতুন পথে উদারপন্থী সরকারগুলো

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আক্রমণকে চলতি দশকে বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে তৃতীয় বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাক্কা করোনা মহামারি, প্রথমটি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ। এই তিন ধাক্কায় বিশ্বব্যাপী পুঁজি, পণ্য ও আন্তঃসীমান্ত প্রবাহ প্রায় বন্ধ হওয়ার পর এখন ইউরোপ-আফ্রিকার রুটিরুজি বিপন্ন।

মুক্ত বাণিজ্যে ইউক্রেন সংকটের থাবা

দ্য ইকোনমিস্টের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা এবং মস্কোর কৃষ্ণসাগর অবরোধে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের আঘাত এসেছে। এর জেরে বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানিসহ পণ্যের বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি।

জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে, গমের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। বছরের শেষের দিকে গ্যাস সংকটে পড়বে ইউরোপীয়রা। বৈদ্যুতিক গাড়িসহ ব্যাটারিতে ব্যবহৃত নিকেলে ঘাটতি তৈরি হবে। এরইমধ্যে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংস্থা ও ভোক্তারা সাপ্লাই চেইনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন, ফাইল ছবি

রাশিয়া-চীনের মতো স্বৈরাচারীদের সঙ্গে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রশ্নের মুখে পড়েছে, যা মুক্ত-ব্যবসায়ীদের জন্য অস্বস্তিকর। মানবাধিকারের অপব্যবহার, নিরাপত্তা বিপন্ন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে হুমকি তৈরি হয়েছে। এমতাবস্থায় মস্কোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় উদারপন্থী দেশগুলোকে নতুন পথ খুঁজে বের করতে হবে, বলছে দ্য ইকোনমিস্ট।

শত্রুর সঙ্গে কীভাবে বাণিজ্য করা যায়, গত কয়েক দশকে সেটি পরিষ্কার হয়ে গেছে। শীতল যুদ্ধের সময় পশ্চিমাদের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নেরর শক্তি ও শস্যের বাণিজ্য পরিচালনা করা হতো। পরে গণতন্ত্রের সমাজে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপোস না করে সর্বোচ্চ বাণিজ্য চালানোর দিকে ধাবিত হয় বিশ্ব।

এখন রাশিয়ার আগ্রাসন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, উদারপন্থী দেশগুলো ওপর স্বৈরাচারী দেশগুলোর ছড়ি ঘোরানো থেকে বিরত রাখতে পণ্য সরবরাহ চেইন পুনর্গঠন প্রয়োজন। অন্যদিকে, সামরিক মিত্রদের সঙ্গে আরো বাণিজ্যের পথে হাঁটছে পশ্চিমারা, যা সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরতার দিকে ধাবিত করবে উদারপন্থী দেশগুলোকে।