মিসাইল টেস্টে ব্যর্থ হল পাকিস্তান!

পাকিস্তানের সিন্ধুর জামশোরোতে আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় একটি অজ্ঞাত বস্তু লক্ষ্য করেছেন সেখানকার অধিবাসীরা। বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে দেখতে পাওয়া ওই বস্তুটি অনেকটাই রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্রের মতো দেখতে, যা নিক্ষেপ করার পর তার গতিপথের মধ্য অবস্থায় ছিল।

মিসাইল টেস্টে ব্যর্থ হল পাকিস্তান

সামাজিক যোগামাধ্যমের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, ওই অজ্ঞাত বস্তুটি ছিল একটি মিসাইল, যা পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের পরীক্ষাগার থেকে ছোড়া হয়েছিল। মিসাইলের উৎক্ষেপণ বেলা ১১টার দিকে হওয়ার কথা থাকলেও ট্রান্সপোর্টার ইরেক্টর লঞ্চারের ত্রুটির কারণে তা এক ঘণ্টা স্থগিত করা হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে এই মিসাইল নিক্ষেপের পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়।

তবে উৎক্ষেপণের কয়েক সেকেন্ড পরেই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে এর নির্দিষ্ট পথ থেকে নামতে দেখা যায়, এটি গতিপথ থেকে ছিটকে সিন্ধুর থানা বুলা খানের কাছে আছড়ে পড়ে।

এদিকে, পাকিস্তানের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এই সংক্রান্ত খবর প্রচার করলেও একেবারেই নীরব রয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। পাকিস্তানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনুসারে, স্থানীয় প্রশাসন মিসাইল উৎক্ষেপণ সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলছে, এটি একটি নিয়মিত মর্টার ট্রেসার রাউন্ড, যা কাছাকাছি রেঞ্জ থেকে গুলি করা হয়েছিল।

তবে এই দাবি অনেকাংশেই অযৌক্তিক, কারণ সর্বোচ্চ ৫ কিলোমিটার পরিসীমাসহ মর্টারে একটি ট্রেসার প্রজেক্টাইল এতোটা উচ্চতায় উঠতেই পারবে না। অন্যদিকে, পাকিস্তানের এআরওয়াই নিউজ চ্যানেলের মতে, ‘বিমান, রকেট বা এ রকম কিছু’ নিচে পড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে বলেও জানা গেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সিন্ধু প্রদেশের জামশোরোতে আকাশ থেকে একটি উড়ন্ত বস্তু নিচের দিকে পড়ছে। বস্তুটি পড়ার সময় এর পেছনের অংশে ধোঁয়া দেখা গেছে।

দেশটির বার্তা সংস্থা কনফ্লিক্ট নিউজ পাকিস্তান জানিয়েছে, কয়েকদিন আগে ভুলভাবে ভারত থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের জবাব দিতেই হয়তো পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে।

এদিকে, জামশোরোর ডেপুটি কমিশানার জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি কোট্রিতে একটি সামরিক অনুশীলনের সময় একটি নিয়মিত মর্টার ট্রেসার রাউন্ডে গুলি চালানোর সঙ্গে সম্পর্কিত।

এক টুইট বার্তায় কনফ্লিক্ট নিউজ পাকিস্তান জানিয়েছে, ‘ভারতের ছোড়া ব্রক্ষ্ম ক্ষেপণাস্ত্রের জবাবে পাকিস্তান একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে গেলে তা লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে এবং কাছেই পড়ে গেছে।’

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অ্যারোসইন্ট ডিভিশান পিএসএফ তাদের টুইটার থেকে এক বার্তায় জানিয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনী তাদের ফায়ার রেঞ্জ পরীক্ষা করেছে। তারা বলেছে, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওটির পরিপ্রেক্ষিতে, এই শহরের আশপাশে নিজস্ব ফোর্স টেস্টিং রেঞ্জ সক্রিয় রয়েছে। এখানে আতঙ্ক সৃষ্টির কোনো কারণ নেই।’

পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকের মতে, পরীক্ষার এলাকায় নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করার পূর্বে আরও একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, একটি ‘নোটাম’ বা ‘নোটিশ টু এয়ারমেন’ ইতোমধ্যেই জারি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে যে আকাশসীমায় পরীক্ষা চালানো হবে তা আগে থেকেই এয়ারলাইন্সগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

‘নোটাম’এ, পরীক্ষার সময়সূচির বিশদ বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছিল, যেখানে ১৭ এবং ১৮ মার্চের কথা নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

‘নোটাম’ বা ‘নোটিশ টু এয়ারমেন’ হল টেলিকমিউনিকেশনের মাধ্যমে বিতরণ করা নোটিশ, যাতে কোনো বৈমানিক সুবিধা, পরিষেবা, পদ্ধতি বা বিপত্তি, অবস্থা বা পরিবর্তন সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখ থাকে। এই তথ্য- যা সময়মত জানা ফ্লাইট অপারেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের জন্য অপরিহার্য একটি বিষয়।