ইউক্রেনে নিত্যনতুন অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া

ইউক্রেনের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে একের পর এক নতুন ও বিধ্বংসী অস্ত্রের আঘাত হানছে রাশিয়া। পশ্চিম ইউক্রেনের ইভানো-ফ্র্রানভিস্ক অঞ্চলে কথিত অস্ত্রভাণ্ডারে কিনঝাল হাইপারসনিক মিসাইল হামলার একদিনের মাথায় রুশ বাহিনী মারিউপলে থারমোবেরিক রকেট ছুঁড়েছে। এসব নিত্যনতুন অস্ত্রপ্রয়োগ যতটা না ইউক্রেনের শক্তিক্ষয়ের জন্য, তারচেয়ে বেশি ন্যাটোর প্রতি প্রচ্ছন্ন বার্তা বলে মনে করছেন পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা।

ইউক্রেনে নিত্যনতুন অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া

মারিউপলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে রাশিয়ার থারেমাবেরিক টিওএস-১এ এমএলআরএস রকেট ছোঁড়ার প্রথম ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ব গণমাধ্যম রাশিয়া টুডে এ ভিডিও প্রকাশ করেছে।

থারমোবেরিক বা ভ্যাকুয়াম বম্ব হচ্ছে অত্যন্ত বিধ্বংসী অস্ত্র, যা মূহূর্তেই লক্ষ্যবস্তুর আশপাশের সব বাতাস শুষে নিয়ে জায়গাটির তাপমাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এতে করে সেখানে নিমেষেই আগুন ধরে যায়। থারমোবেরিক বোমা বিস্ফোরণস্থলের আশেপাশে অসংখ্য ছোট বিস্ফোরণ দেখা যায়, যেগুলো মূলতঃ ভ্যাকুয়াম হটস্পট। থারমোবেরিক রকেট নিক্ষেপের কিছুক্ষণের মধ্যে এসব ভ্যাকুয়াম হটস্পট ও চারপাশে সবকিছু অত্যধিক তাপে ও আগুনে পুুুড়ে ছাই হয়ে যায়।

থারমোবেরিক বা ভ্যাকুয়াম বোমা প্রয়োগের সুযোগ খোলা রাখতে যুদ্ধ শুরুর পরপর ইউক্রেনে টিওএস-১এ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম মোতায়েন করে রাশিয়া। মারিউপলের পর ইউক্রেনের ইজিউম শহরেও রুশ বাহিনী থারমোবেরিক বোমা প্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে অসমর্থিত সুত্রে খবর পাওয়া গেছে। খারকভ ও দোনেতস্কের সংযোগ স্থাপনকারী মহাসড়কের পাশের শহর ইজিউম। কৌশলগত গুরুত্বের কারণে শহরটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় ইউক্রেন ও রাশিয়া। বর্তমানে শহরটির দক্ষিণ অংশ ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও উত্তরদিকে কামেনকা থেকে সরবরাহ পথটিতে রুশ বাহিনীর জোরালো উপস্থিতি রয়েছে। উভয়পক্ষ শনিবার থেকে ইজিউমের আশেপাশে বাড়তি সৈন্য সমাবেশ করছে।

এর আগে শুক্রবার পশ্চিম ইউক্রেনে একটি ভূগর্ভস্থ মিসাইল ডিপোতে কিনঝাল মিসাইল হামলার কথা জানায় রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ বলেন, ইভানো-ফ্রানভিস্ক অঞ্চলে একটি ভূগর্ভস্থ অস্ত্রভাণ্ডার হাইপারসনিক মিসাইল হামলার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে।

আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য কিনঝাল বা ড্যাগার মিসাইল প্রথাগত ও পারমাণবিক উভয় ধরণের গোলা বহনে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের টোমাহক মিসাইলের তুলনায় ১০ গুণ বেশি গতি রাখে কিনঝাল। ইউক্রেনে রাশিয়ার এই মিসাইল নিক্ষেপ যুদ্ধক্ষেত্রে হাইপারসনিক বা শব্দের চেয়ে বেশি গতির ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের প্রথম ঘটনা।

এদিকে গতকালও রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হাইপারসনিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছে বলে বিভিন্ন অসমর্থিত সুত্র দাবি করেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়া অথবা ইউক্রেন এ সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য দেয়নি।

ইউক্রেনে শক্তিশালী মিসাইল নিক্ষেপের মাধ্যমে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ন্যাটো জোটকে নিজের শক্তি জানান দিচ্ছেন বলে মনে করছেন কোনো কোনো পর্যবেক্ষক। যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (ডিআইএ) সাবেক কর্মকর্তা, রাশিয়া বিশেষজ্ঞ রেবেকা কফলারের মতে, পুতিন মূলতঃ পাশ্চাত্যের দেশগুলোকে এই মর্মে কৌশলগত বার্তা দিচ্ছেন যে, পারমাণবিক যুদ্ধের পথে এক একটি ধাপ তিনি ধীরে ধীরে অগ্রসর হবার মতো স্থিরতা ধারণ করেন। তিনি চাইলে অন্য মিসাইলের মাধ্যমেও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারতেন কিন্তু হাইপারসনিক কিনঝাল ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি আমাদের কি নেই সে কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন।