এনআইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সার্টিফিকেট সবই জাল করে ওরা!

ভুয়া এনআইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডর জাল সার্টিফিকেট তৈরিসহ যেকোনো জাল নথিপত্র তৈরিতে পারদর্শী গোলাম মোস্তফা চক্র। বিপুল পরিমাণ ভুয়া এনআইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং জাল নথিপত্র তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধারসহ এই চক্রের ৫ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

তারা হলেন-  চক্রের মূলহোতা মো. গোলাম মোস্তফা (৬০),  তার সহযোগী মো. জালাল বাশার (৫৪), মো. মুসলিম উদ্দিন (৬৫), মো. মিনারুল ইসলাম (মিন্নি) এবং মো. তারেক মৃধা (২১)।

র‍্যাবের এই অভিযানে উদ্ধার করা হয় ২টি কম্পিউটার, ২ হাজার ৪৬০টি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের জাল প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ, ২৬টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, একটি ল্যাপটপ, একটি ডিজিটাল ক্যামেরা, ১৮টি ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, ৮০টি সাদা রঙের প্লাস্টিকের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির ব্লাঙ্ক কার্ড, ৫০টি স্বচ্ছ কার্ড হোল্ডার, ২ রিল সিকিউরিটি লেমিনেটিং পেপার, যা দিয়ে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা যায়, একটি কার্ড প্রিন্টার, ৪টি সফ্টওয়্যারের সিডি, ৪টি পেনড্রাইভ, ৫টি মোবাইল ফোন এবং নগদ টাকা। 

র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা ৫-৭ জনের একটি চক্র। তারা গত ৮-১০ বছর যাবত ভুয়া এনআইডি কার্ড, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জাল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য জাল নথিপত্র তৈরি করে আসছে।

গ্রেপ্তারকৃত মোস্তফা এই চক্রের মূলহোতা, বাকিরা তার সহযোগী। এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন নির্বাচন অফিস ও বিআরটিএ অফিসের সামনে অবস্থান করে গ্রাহকদের টার্গেট করতো। পরবর্তীতে তাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিয়ে প্রতারণা করতো। আস্থা অর্জনে তারা হুবহু জাল প্রাপ্তি স্বীকার পত্র ও মানি রিসিটটি বিআরটিএ ও বিভিন্ন ব্যাংকসহ ভুয়া সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে গ্রাহককে প্রদান করতো। একইভাবে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে চটকদার বিজ্ঞাপন পোস্ট করতো।

পরবর্তীতে কোনো গ্রাহক তাদের সাথে এনআইডি/ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য যোগাযোগ করলে তারা তাদের মধ্যে কেউ গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুততম সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স/এনআইডি প্রাপ্তির অফার দিতো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার ক্ষেত্রে তার ফেক আইডি ব্যবহার করতো।

তারা প্রতিটি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য গ্রাহকদের নিকট ৩-৪ হাজার টাকা দাবি করতো। এছাড়া দ্রুত এনআইডি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে তারা ৮-১০ হাজার টাকা দাবি করতো। এক্ষেত্রে তারা বাইক রাইডার, লাইসেন্সবিহীন বিভিন্ন গাড়ির চালক, যারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স, এনআইডি পেতে আগ্রহী অথবা যারা অবৈধভাবে লাইসেন্স, এনআইডি প্রত্যাশী তাদের টার্গেট করে থাকে।

এরপর তারা ৩-৭ দিনের মধ্যে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ও এনআইডি সরবরাহ করে। জরুরি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে তারা একদিনের মধ্যেই সরবরাহ করে থাকে। তারা মোবাইল ব্যাংকিং বা সরাসরি অর্থ লেনদেন করে থাকে।