শুরু হচ্ছে রুবলে গ্যাস বিল আদায়, মহা বিপাকে ইউরোপ

অবন্ধু দেশগুলো থেকে গ্যাসের বিল আদায়ে নতুন যে নিয়ম আরোপ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তা কার্যকর হতে বাকি আছে আর মাত্র তিন দিন। এরপর থেকে রুবলে গ্যাসের বিল দিতে হবে, নয়তো সে দেশগুলোতে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেয়া হবে। খবর রয়টার্স।

ইউরোপে যাচ্ছে রাশিয়ার গ্যাস

ইউক্রেনে হামলার প্রেক্ষিতে গত এক মাসে রাশিয়ার ওপর কয়েক হাজার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা দেশগুলো। তাদের এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ব্যাংকগুলো বহির্বিশ্বের সাথে লেনদেনে ব্যর্থ হচ্ছে এবং বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এসবের পাশাপাশি রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দামও অনেকখানি পড়ে গেছে।

রাশিয়া এ ব্যাপারে সতর্কবার্তা জানায় রাশিয়ান তেল-গ্যাস ক্রয়কারী দেশগুলোর প্রতি। সতর্কবার্তার পরও যুক্তরাষ্ট্রের চাপে অনেক দেশই রাশিয়ার ওপর আরোপিত এসব নিষেধাজ্ঞায় শামিল হয়। শেষ পর্যন্ত রাশিয়া ঘোষণা করে, এখন থেকে ডলার বা ইউরোতে নয়, গ্যাসের দাম পরিশোধ করতে হবে রুবলের মাধ্যমে। প্রেসিডেন্ট পুতিন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে জ্বালানি বিতরণ সংস্থা গ্যাজপ্রমকে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেয়।

রুবলে পরিশোধ করতে হবে গ্যাসের দাম

মস্কোর এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারার কাজ হয়েছে। ডলার বা ইউরোকে এড়িয়ে রুবলকে বিনিময়ের মাধ্যম বানানোর কারণে নিঃসন্দেহে রুবল শক্তিশালী হবে। গত কয়েক সপ্তাহে ডলারের বিপরীতে রুবলের দর যেখানে কমছিল, সেখানে এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নয় শতাংশ বেড়েছে মুদ্রাটির রেট।

অন্যদিকে যেসব দেশ রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, রুবল সংগ্রহ করতে গিয়ে এখন সে ব্যাংকগুলোরই দ্বারস্থ হবে। এ কারণে পুতিনের এই ঘোষণাকে বলা হচ্ছে পশ্চিমের দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মস্কোর সবচেয়ে কঠিন প্রতিক্রিয়া।

অক্সফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি স্ট্যাডিজের বিশিষ্ট রিসার্চ ফেলো জোনাথন স্টার্ন বলেন, অধিকাংশ ইউরোপীয় ক্রেতাদের পক্ষে এ পরিমাণ রুবল জোগাড় করা সম্ভব হবে না, বিশেষ করে স্বল্প নোটিশে তো নয়ই। এক্ষেত্রে তিনি চুক্তির শর্তাবলি লঙ্ঘন হবে বলে মত দেন।

উল্লেখ্য, ইউরোপের মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ গ্যাসের জোগানদাতা দেশ রাশিয়া। বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও রাশিয়ার গ্যাস পরিত্যাগ করার মতো পরিস্থিতি তাদের নেই। প্রথমত এত স্বল্প সময়ে বিকল্প জোগানদাতা পাওয়া কঠিন, দ্বিতীয়ত রাশিয়া যে দামে গ্যাস সরবরাহ করে, অন্য দেশগুলোতে এত স্বল্প মূল্যে গ্যাস পাওয়া সম্ভব নয়।

ফলে তারা রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানির বিষয়টিতে নিশ্চুপই ছিল। রাশিয়াও যুদ্ধ চলাকালে গ্যাস বিক্রি করে বিপুল অর্থ আয় অব্যাহত রাখে। তবে রুবলের মাধ্যমে বিল পরিশোধের শর্ত দিয়ে তাদেরকে ব্যাপক চাপের মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে।