যে ৬ কারণে স্মরণকালের সংকটে শ্রীলঙ্কা

দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় স্মরণকালের সংকট চলছে। দেশটির অর্থনীতি কার্যত ভেঙে পড়েছে, সর্বত্র দেখা দিয়েছে নিদারুণ হাহাকার। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এতটা দুর্দশা দেখেনি লঙ্কানরা। বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র সংকটে জ্বালানি তেল ও খাদ্য কিনতে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে মানুষ।

শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়, ফাইল ছবি

বিবিসি জানায়, বৈদেশিক ঋণের জর্জরিত শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি বেসামাল হয়ে পড়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। কাগজের অভাবে স্কুলের পরীক্ষা পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। এই সংকটের পেছনে প্রধান ছয়টি কারণ তুলে ধরেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমটি।

১. ঋণে জর্জরিত হওয়া: দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে গত ১৫ বছর ধরে ব্যাপক ঋণ নিয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকারগুলো। ২০০৭ সাল থেকে সার্বভৌম বন্ড থেকে বিপুল অর্থ নেওয়া হয়। কোনো দেশের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে এই বন্ড বিক্রি করা হয়। এই অর্থ পরিশোধ করেনি দেশটি।

শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়, ফাইল ছবি

২. ঋণ পরিশোধে বেহাল দশা: সার্বভৈৗম বন্ড বাবদ শ্রীলঙ্কার ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এ ছাড়া দেশীয় বিভিন্ন উৎস থেকেও বিশাল অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এ বছর প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ শোধ করতে হবে, যা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে গণমাধ্যমগুলো।

৩. কর কমানো: ২০১৯ সালের শেষ দিকে ক্ষমতায় এসে ভ্যাট ও ট্যাক্স ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেন শ্রীলংকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ। কেবল ভ্যাটই ১৫ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়, যা অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের বদলে এখন সংকট তৈরি করেছে। ২০০৯ সালে একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে সফলতা পেলেও এবার করোনার কারণে উল্টোটা হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

৪. পর্যটন ও রেমিট্যান্সে বিপর্যয়: বৈদেশিক মুদ্রার বড় জোগান আসা পর্যটন ও রেমিট্যান্স খাত করোনার কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে। এই দুই খাত প্রায় দুই বছর ধরে মহামারি সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে থমকে থাকে, যা লঙ্কান অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়।

৫. অর্গানিক চাষে কৃষিতে ভাটা: ২০১৯ সালে ক্ষমতায় এসে দেশে অর্গানিক কৃষি ব্যবস্থা চালু করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন তিনি। এর প্রভাবে চালের উৎপাদন ২০ শতাংশ কমে যায়। চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশটি ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের চাল আমদানি করতে বাধ্য সরকার।

৬. সংকট সামাল দেবানোর চেষ্টা: বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন মেটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করছে শ্রীলঙ্কা। সংস্থাগুলো থেকে ঋণ পেতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৫ শতাংশ। চীন ও ভারতের কাছে আরো ঋণ চেয়েছে দেশটি। ঋণের এই স্তূপ থেকে সহসা বেরিয়ে আসতে পারবে না দ্বীপরাষ্ট্রটি।